কিশোরগঞ্জের প্রাণরেখা নরসুন্দা নদীটি পুণ:রুদ্ধার হোক

এফএনএস (আমিনুল হক সাদি; কিশোরগঞ্জ) :
| আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম | প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম
কিশোরগঞ্জের প্রাণরেখা নরসুন্দা নদীটি পুণ:রুদ্ধার হোক

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার দুই তীর। শীত মৌসুমে নরসুন্দায় আসতো অতিথি পাখি। পাখিদের কিচির-মিচির কলরবে ঘুম ভাঙত দুই তীরের বাসিন্দাদের। শীত আর অতিথি পাখি যেন ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতি বছরের মতো এবারের শীতেও অতিথি পাখির আগমন ঘটলেও তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয় না,এসব পাখি আসলেও নদীতে কচুরিপানা থাকায় পানিতে  ডুব সাতার খেলতে পারে না। গাছের উপরে ও আকাশে উড়াউড়ি করে সময় অতিক্রম করে। নরসুন্দা নদের আকাশে অতিথি পাখির বিচরণ এক অপরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করত। উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ে এসব অতিথি পাখি এখানে নির্ভাবনায় মেতে উঠত ও জলকেলিতে ব্যস্ত থাকত। কেউ আবার ডুব সাঁতারে ব্যস্ত হত। তাদের এ কার্যকলাপ দেখতে এবং ক্যামেরাবন্দি করতে ছুটে আসতো জেলার দূর-দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা। অতিথি পাখি দেখতেই দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষণীয় হতো। এসব অতিথি পাখির কলকাকলি আর কিচির-মিচির শব্দে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে মধুময় সুরের আবহ বিরাজ করতো। এমনকি ক্যাম্পাসবাসীর ঘুম ভাঙত অতিথি পাখির কলকাকলিতেও। আবার সারাদিন কর্মব্যস্ততা শেষে অতিথি পাখির মধুময় সুরে ঘুমিয়ে পড়েন তারা। তবে এবারে  অতিথি পাখি এলেও নরসুন্দা নদে কচুরীপনায় ভরে গেছে। শাপলার অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। এক সময়ে লাল শাপলার মাঝে অতিথি পাখির উঁকি দেখতে কত না মধুর ছিল। প্রতি বছর উত্তরের শীতপ্রধান দেশ সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, সিনচিয়াং ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশে আসা পাখিদের ৮-৯ শতাংশ এই ক্যাম্পাসে আসে। মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই এরা এ দেশে আসতে শুরু করে। মার্চের শেষ দিকে তারা আপন ঠিকানায় ফিরে যায়। এছাড়াও কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলেও পাখির আগমন ঘটতো। এদের বেশিরভাগই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতারি অন্যতম। এছাড়া মানিক জোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি প্রভৃতি পাখি এদেশে অতিথি হয়ে আসে প্রতি বছর। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, শতশত পরিজায়ী পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয় নরসুন্দা নদীর চারপাশ। কিন্তুু নদীটি ভাগাড়ে পরিণত হওয়া, নদীতে একটু জলের সন্ধানে পাখিগুলো হাহাকার করছে,কচুরিপানার ফাঁকে একটু জলের সন্ধানে!! কচুরিপানা অপসারণে কর্তৃপক্ষের আশু সুদৃষ্টি কামনা করছি। এছাড়া কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদীর উৎসমুখ থেকে পতন মুখ পর্যন্ত মোট ৬৭ কি:মি: পুরোটাই বাপার টিম পরিদর্শন করেছে। নদীটির প্রতিটি ফুট দখলের শিকার। এতটা দূষন এবং দখল খুব বেশি নদীতে দেখিনি। সুইচ গেট, বাঁধ, ভূমিরূপের পরিবর্তন করে নদীটিকে চিহ্নিত করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা চাই কিশোরগঞ্জের প্রাণরেখা হিসাবে পরিচিত এই নদীটি পুণ:রুদ্ধার হোক। নরসুন্দা নদের দুই তীরকে পরিচ্ছন্ন করে পাখিদের জন্য আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা হলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হতো বলে সচেতন মহলের ধারণা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে