শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় জমে উঠেছে শীতের পিঠা বিক্রি। উপজেলা জুড়ে ফুটপাতের পাশে মোড়ে মোড়ে, দোকানে দোকানে, রাস্তার পাশে এখন শোভা পাচ্ছে শীতের পিঠার দোকান। শীতের এ মৌসুমে মুখে জল আনা পিঠা-পুলির দোকানে ভিড় করছে শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। তারা পিঠা খেতে খেতে মজার গল্পে মেতে ওঠেন। দোকানদাররা খুবই খুশি বিক্রি বাড়ার কারণে। সরেজমিন দেখা যায়, দিনে তেমন একটা দেখা না গেলেও সন্ধ্যা থেকেই জমে ওঠে ভ্রাম্যমাণ এসব পিঠার দোকান। এসব দোকানে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ডিম চিতই পিঠা ও পাটিসাপটা পিঠা বানানো হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা বেশি জনপ্রিয়। কেউ কেউ বাড়ি থেকে রস ও দুধ জ্বালিয়ে নিয়ে আসে দুধ চিতই পিঠা তৈরিতে। অনেক পরিবারের যেন শীতের দিনে বাড়িতে বসে পিঠে বানানোর অবকাশই নেই। তাইতো তারা পরিবার পরিজন নিয়ে জীব গাড়ি, প্রাইভেট কার অথবা মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে ছুটে আসে সন্ধ্যার পরে পিঠার দোকানে। উপজেলার পিঠার দোকানগুলোতে প্রতিটি চিতই পিঠা ৫ টাকা ও ভাপা পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কোনো কোনো জায়গায় ১৫ টাকায় বিক্রি হয় স্পেশাল ভাপা পিঠা। আবার অনেক দোকানি চিতইপিঠার মধ্যে ডিম দিচ্ছেন। এই ডিম চিতই পিঠা প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভাপা পিঠা বানালেও চিতই পিঠার সঙ্গে এসব দোকানিরা দিচ্ছেন সরিষার ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, মরিচের ভর্তা ও ধনেপাতা ভর্তা। এসব দোকানে পিঠা খেতে আসা মানুষেরা বলেন, শীতের আমেজে পিঠা খেতে ভালো লাগে। বিক্রেতারা বলেন, শীতের মৌসুম এলেই তারা কেবল এই ব্যবসায় জড়ান। বছরের অন্যান্য সময় তারা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় শ্রম দেন। তারা বলেন, এ বছর শীতের আগমনে পিঠা বিক্রি শুরু হয়েছে এক-দেড় মাস ধরেই। উপজেলার সেনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গেটে, সেনহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কোণে, সেনহাটি মদীনা মসজিদের পাশে, গাজীরহাট, কোলা বাজার, সেনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুব-উত্তর কোণের মোড়ে, লাখোহাটি মোড়ে ও বাজার মোড়ে, কামারগাতী বাজার মোড়ে, উপজেলা মোড়ে, ব্রহ্মগাতী ও পানিগাতী মোড়ে, দিঘলিয়া আশ্রয়কেন্দ্র মোড়, ফরমাইশখানা গোলারঘাট, ব্রহ্মগাতী সূতিরকূল, আড়ুয়া খেয়াঘাট, নন্দপ্রতাপ ব্রীজের গোড়া, নন্দনপ্রতাপ বাজার, মাঝিরগাতী, মোল্লাডাঙ্গাসহ অনেক জায়গায় এ পিঠার দোকান জমে উঠেছে। সারাবছর কম বেশি পিঠা বিক্রি হলেও শীত এলে বেড়ে যায় ক্রেতাদের আনাগোনা। পিঠাপ্রেমিকদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে এসব দোকান। পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারীরাও দোকানে পিঠা বিক্রি করছেন। সেনহাটি মদীনা মসজিদ সংলগ্ন পিঠা বিক্রেতা রাহিলা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, বিকাল থেকে স্বামীকে নিয়ে পিঠা বিক্রি করে যা আয় করি তা দিয়ে আমারা খেয়ে পরে চলতে পারি। সেনহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন দোকানের ক্রেতা মিজান, আঃ কাদের জনি, সেনহাটি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান নবী ও সীমা খাতুন নামের তিনজন ক্রেতা বলেন, আমরা প্রায়ই এখানে পিঠা খাই। চাল ভেঙে গুঁড়া করে পিঠা বানানোর সময় সুযোগ হয় না। ঝামেলা ছাড়া স্বল্প দামে হাতের নাগালে এখন পিঠা পাই। তাই এসব পিঠাই আমাদের ভরসা।সেনহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন পিঠা বিক্রেতা আঃ কুদ্দুস মৃধা বলেন, আমার বাড়ি সেনহাটি বাজার এলাকায়। আমার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। আমি প্রতিদিন ১০/১২ কেজি চালের আটার পিঠা বিক্রি করে থাকি। যা দিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ আমার সংসার চলছে। তবে শীত শেষ হলেই আমরা আবার অন্য পেশায় চলে যাই। সেনহাটি আদর্শ পল্লীর বাসিন্দা এস এম মেহেদী হাসান বলেন, বাসায় পিঠা তৈরি করা অনেক কষ্টকর ও ঝামেলা মনে হয়। তাই আমি আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য বাজার থেকে চিতই ও ভাপা পিঠা কিনে নিয়ে যাই। আমার পরিবারের সদস্যরা এই পিঠাগুলো খুব পছন্দ করেন।