বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের চলমান কর্মবিরতি নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক হলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। ফলে সারাদেশে ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে, যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে এই কর্মবিরতি শুরু হয়। গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফদের অন্তর্ভুক্ত।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি রুমে বৈঠক শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পরও কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান রানিং স্টাফদের প্রতিনিধিরা।
সমস্যার মূল কারণ
রানিং স্টাফদের অভিযোগ, আগে তাদের বেতন গঠনে মাইলেজ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে এক দিনের বেসিক বেতনের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হতো। অবসরকালীন ভাতাতেও মূল বেতনের সঙ্গে ৭৫ শতাংশ যোগ করা হতো। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এই সুবিধা বাতিল করে, যা নিয়ে রানিং স্টাফরা ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছেন।
রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের দাবির পক্ষে থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো তা বাস্তবায়নে অনড়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, "অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন শর্ত অনুযায়ী, নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং অবসরে যাওয়ার সময় সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতেই পেনশন নির্ধারণ করা হবে। যা আগে ছিল না।"
সরকারি অবস্থান
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "রেলের ওভারটাইম সংক্রান্ত যৌক্তিক দাবিগুলো অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছে। তবে সরকারের বর্তমান আর্থিক সংকটের কারণে সব দাবির সমাধান এখনই দেওয়া সম্ভব নয়।"
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, "এটি অর্থ বিভাগের বিষয়, আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। রেলওয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম দ্রুতই পুনরায় চালু করতে চাই।"
বিকল্প ব্যবস্থা
রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে রেলপথ মন্ত্রণালয় বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করেছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহগামী যাত্রীরা তাদের ক্রয়কৃত রেল টিকিটে বিআরটিসি বাসে ভ্রমণ করতে পারবেন।
অন্যদিকে, আন্দোলনরত রানিং স্টাফরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার পর পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে, রেলওয়ে স্টেশনে জনশূন্য প্ল্যাটফর্ম, বন্ধ ট্রেনের দরজা এবং হতাশ যাত্রীদের দৃশ্য সারাদেশেই চিত্রিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এই অচলাবস্থা নিরসন হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন যাত্রীরা।