নওগাঁর মহাদেবপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই কৃষককে মধ্যযুগীয় কায়দায় হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমানবিকভাবে মারপিটের ভিডিও ভাইরাল হবার পর আসামীরা আদালতে জামিন নিতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক দুজনকে কারাগারে পাঠান।
উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের বাগডোব গ্রামের মোবারক মন্ডলের ছেলে মামুনুর রশিদ অভিযোগ করেন যে, তিনি দেড় বছর আগে হাতুড় ইউনিয়নের বেলকুড়ি গ্রামে ১১ শতক জমি কিনেন। গত ১৩ জানুয়ারি থেকে তার লোকেরা সেখানে ইট দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেন। গত ১৭ জানুয়ারি সকালে হাফিজুল ইসলাম নামে এক শ্রমিকসহ মামুনুর রশিদ সেখানে গেলে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা প্রতিপক্ষরা লোহার রড, হাতুড়ি, বাঁশের লাঠি প্রভৃতি নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ চালায়। তারা মামুনুর রশিদকে মাটিতে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় কোপাতে থাকে। তার গগণবিদারী চিৎকারে আশে পাশের মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েন। এতে মামুনের ডান পা ও গোড়ালী ভেঙ্গে যায় এবং সারা শরীরে কালশিরা দাগ পড়ে যায়। প্রতিপক্ষরা সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা শ্রমিক হাফিজুল ইসলামকেও বেদম মারপিট করে।
পরে মারাত্মক জখম অবস্থায় স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখান থেকে রাজশাহীতে উন্নত চিকিৎসা শেষে গত ২৬ জানুয়ারি রাতে মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে বেলকুড়ি গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে হারুন, তার ভাই ফারুক, তাদের মা হালিমা, হারুনের ছেলে রিফাত, মৃত হযর আলীর ছেলে আজিজুল, আব্দুল, তার ছেলে আলম, কালাম, সাইদুর, রাইহান, আজিজার ও অজ্ঞাত ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারপিটের একটি ভিডিও স্থানীয় জনপ্রিয় মহাদেবপুর দর্পণ নামক ফেসবুক আইডিতে আপলোড দেয়া হলে মুহুর্তে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, হারুন, ফারুকসহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি লোহার রড, বাঁশের লাঠি প্রভৃতি দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা মামুনুর রশিদের উপর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোড়ে জোড়ে একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। সেই সাথে মামুনুর রশিদ ও বাবারো, ও বাবা, ও মা বলে আত্মচিৎকার করতে থাকেন। ভিডিওটি দেখেই মুহুর্তে সকলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ভিডিওটি বিভিন্ন মাধ্যমে গত ২০ ঘন্টায় ১ দশমিক ২ এম (১২ লাখ) ভিউ, ২২ কে (২২ হাজার) শেয়ার, ৫ কে (৫ হাজার) লাইক ও ৬০০ কমেন্ট হয়। এছাড়া ভিডিওটি ডাউনলোড করে অসংখ্য মানুষ তাদের নিজেদের আইডিতে পোষ্ট করেন। সবখানেই মানুষ এই ঘটনায় ঘৃণা প্রকাশ করে দ্রুত দোষীদের আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
ভিডিও ভাইরাল হবার পর এই মামলার এজাহারভূক্ত ১১ আসামীর মধ্যে ১০ জন নওগাঁর আমলি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ বিচারক ৮ জনের জামিন মঞ্জুর করেন এবং ১-২ নং আসামী হারুন ও ফারুকের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাশমত আলী জানান, বাদীর দেয়া মামলা সাথে সাথেই এন্ট্রি করা হয়েছে। আসামীদের ধরার জন্য বার বার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই মহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশী তৎপরতায় পালিয়ে থাকা আসামীরা কোর্টে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়েছে। দ্রুত মামলাটির তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।