গোমস্তাপুরে নানা আয়োজনে পোসালু উৎসব পালিত

এফএনএস (মোঃ আল মামুন বিশ্বাস; গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : | প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম
গোমস্তাপুরে নানা আয়োজনে পোসালু উৎসব পালিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে নবান্নের অংশ হিসেবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পোসালু উৎসব পালিত হয়েছে। শুক্রবার দিনব্যাপি  পুনর্ভবা নদীঘেঁষা রহনপুর পৌর এলাকার বাবুরঘোন মহল্লায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। উত্তর রহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মমতাজ বেগম এই উৎসবের উদ্যোক্তা। প্রতিবছর তিনি এলাকার শিশু শিক্ষার্থী ও গ্রামের প্রতিবেশী নারীদের নিয়ে এই উৎসবটি পালন করে থাকে।নতুন প্রজন্মের সামনে নবান্ন উৎসবের বিষয়টিকে তুলে ধরতে এই পোসালু উৎসবের আয়োজন। ওইদিন এলাকাটিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁদের প্রিয় শিক্ষিকার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে পোসালু উৎসবে অংশ নিয়েছেন। প্রতিবছর মমতাজ আপা এই উৎসবের আয়োজন করে থাকে। তিনি গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো নতুনদের কাছে তুলে ধরতে বিভিন্ন ধরনের নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। তিনি এই উৎসব পালনের জন্য গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, আলু, ডিম ও অন্যান্য উপকরণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এদিকে গ্রামের নারীরা ও ছাত্র-ছাত্রীরা হলুদ শাড়ি পরে, হরেক রকমের ফুলের মালায় সেজে উৎসবে অংশ নেন। সকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, কবিতা পাঠ, ঘর করে গীত করে ঘুটি আনা, হাতের উপর খোপলা নিয়ে খেলা, নদী থেকে কলসিতে করে পানি আনাসহ নাচ,গানে ভরপুর ছিল। রান্নার সময় একসঙ্গে বসে গ্রামের নারীরা পিঠা ও ডিম খোসানোর সময় গীত পরিবেশন করতে দেখা গেছে। পোসালু উৎসবটি অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী নাজরিন আকতার বলেন, এই উৎসব পালন করতে পেরে আনন্দবোধ করি। পিঠা খেতে ও বানোনো দেখতে ভাল লাগে। গীত গাইতে চেষ্টা করি।  অনেক কিছু শিখতে পারি। মমতাজ ম্যাডাম পূরনোকালের ঐতিহ্য আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলেন। ভাল লাগছে ছোট ছোটো শিশুদের কবিতা ও গজল আবৃত্তি, নাজ,গানে। নদীকাপড় ধোয়া, কলসিতে পানি ভর্তি করে মায়েরা কিভাবে হেঁটে আসছে ভালই লাগছে। এছাড়া সবাই সারিবদ্ধ ভাবে একসঙ্গে মেঝেতে খেতে বসে অন্যরকম আনন্দ অনুভূতি হচ্ছে। নাইমা জাহান নামে আরেক শিক্ষার্থী জানায়, ম্যাডাম তাঁদের খেলাধূলার আয়োজন করে। সে নাচ করেছেন। সবাই আনন্দ করেছি। পোসালু কিভাবে করতে হয় তা দেখলেন ও জানলেন।  কলেজ শিক্ষক নাসিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, তাঁর আত্মীয় হলেন মমতাজ বেগম। প্রতিবছর তিনি নিজ বাড়িতে এলাকার নারী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরে উৎসব পালন করেন। সে নিজেকে বিরক্ত না হয়ে উদ্দীপনার মাধ্যমে কাজ করে থাকেন। তাঁকে এসব আয়োজনে পরিবারের সবাই সহযোগিতা করে থাকেন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ও কবি রামচন্দ্র রাজোয়ার বলেন, এই উৎসবে অংশ নিতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। গ্রামবাংলা ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরেছেন মমতাজ বেগম।ছোটবেলার স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে। প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক সামসুল ইসলাম টুকু বলেন, নতুন ধানের নতুন চালে হরেক রকম খাবার ও পিঠাপুলিতে মেতে উঠত গ্রামের মেয়েরা। তবে এখন তেমনটা দেখা যায় না। প্রতিবছর মমতাজ বেগম গ্রামবাংলার হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরে উৎসব পালন করে আজ সে পোসালু উৎসব করল। এ বিষয়ে শিক্ষিকা মমতাজ বেগম বলেন, গ্রামীণ সংস্কৃতি অনেকটা বিলুপ্তির দিকে। এসব নতুন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তিনি প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করেন। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য তুলে ধরতে তিনি পোসালু উৎসব করেছেন। গ্রামের নারী পুরুষসহ ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে এ উৎসবে সহায়তা করেছেন বলে তিনি জানান। এ উৎসবে অংশ নেন হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজমল হোসেন মামুন, সাংবাদিক ও লেখক সামসুল ইসলাম টুকু, কবি মোফাজ্জল হোসেন বিশ্বাস,তরিকুল ইসলাম মাস্টারসহ অনেকে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে