বাবার মৃত্যুতে রাতে বাড়ি এসে আটক যুবদল নেতা, সকালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদন : | প্রকাশ: ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
বাবার মৃত্যুতে রাতে বাড়ি এসে আটক যুবদল নেতা, সকালে মৃত্যু

কুমিল্লায় বাড়ি থেকে গভীর রাতে তৌহিদুল ইসলাম (৪০) নামে এক যুবদল নেতাকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। তৌহিদুলের শরীরে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বজনেরা।

শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিজ বাড়ি থেকে যৌথবাহিনী তৌহিদুলকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন স্বজনেরা।

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ফোন করে জানান আহতের কথা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে, সেটা জানায়নি যৌথবাহিনী। তবে তৌহিদুলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই।

তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা সরদার বাড়ির মোখলেছুর রহমান সরদারের ছেলে। তিনি পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত রোববার তার বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি বাড়ি আসেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার তার বাবার কুলখানি হওয়ার কথা ছিল। সংসারে তৌহিদুলের স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি সেনাবাহিনী।

এ বিষয়ে তৌহিদুল ইসলামের ভাই সাদেকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য এবং সিভিল পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি আমার ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় যৌথবাহিনী আমার ভাইসহ আরেকজনকে নিয়ে বাড়িতে এসে এক ঘণ্টা যাবত বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির পরে কোনো অস্ত্র না পেয়ে আমার ভাইকে তারা নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ আমাদের ফোন করে বলে- গোমতী বিলাসের কাছে আমার ভাই আহত অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতাল এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বলেন, ‘আমার চারটা মেয়ে এখনও ছোট। আমি এখন কী করব, মেয়েগুলোকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? আমার স্বামী তো কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে কেন আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে এভাবে হত্যা করা হলো? আমি পুরো ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং বিচার চাই।’

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, তৌহিদুল ইসলাম খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তৌহিদুল ইসলামের ওপর নির্যাতন হয়েছে মরদেহ দেখে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় বিচার চাই।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে