কালীগঞ্জে হলুদ কুড়িয়ে চলে বৃদ্ধার জীবন

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম
কালীগঞ্জে হলুদ কুড়িয়ে চলে বৃদ্ধার জীবন

বয়স ৮০ পেরিয়েছে অসুস্থতার শরীরের ভার এসে পড়েছে হাতে থাকা লাঠির উপর। খুব ছোট থাকতেই তার বিয়ে হয়েছিল। সংসারে ২ কন্যা সন্তানের মা। স্বামীর সাথে নিজেও গতরে খেটে সংসার করে মেয়েদের মানুষ করেছেন। পাত্রস্থ করেছেন মেয়েদের কিন্তু সেখানেও তাদের সংসার করা হয় নি। বেশ কয়েক বছর হলো সারা জীবনের মতো স্বামীকে হারিয়েছেন। তারপর দীর্ঘ সময় এক মেয়েকে সাথে নিয়ে জীবন সংগ্রামের পথ চলছেন সংগ্রামী এই নারী। বর্তমানে কালীগঞ্জ শহরের মধুগঞ্জ বাজারে কাচা হলুদের টুকরা হাট থেকে কুড়িয়ে চলছে তার জীবন। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুর বনানী পাড়ার মৃত সুরত আলীর স্ত্রী সুখজান বিবি জীবনের শেষ বয়সে এসে বৃদ্ধা এই নারী দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের বলতে তার তেমন কিছুই নেই। স্বামী পরিত্যাক্তা বড় মেয়েকে সাধে নিয়ে ় টিনের ভাঙ্গা খুপড়ির মধ্যে কোন রকমে বসত করছেন। দিন গড়িয়ে রাত নামলে চোখের পাতা এক এক হয়ে আসে। পরিশ্রান্ত শরীরে ক্লান্তি নামলে ঘুমও হয় নিশ্চিন্তে। কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো আর কোন কিছু মানে না। যে কারণে সুখজান বিবি কালীগঞ্জ সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ স্কুল সড়কে মধুগঞ্জ বাজারের হলুদ হাটে হলুদের পাইকার ব্যবসায়িদের ঘরে কাজ করে সংসার চালাতেন একসময়। বর্তমানে বয়সের ভারে কর্ম ক্ষমতা হারিয়েছেন বিধান এখন আর কাজ করতে পারেন না,আবার কেউ তাকে কাজে নেন না। যে কারণে প্রতি সোমবার এবং শুক্রবার সাপ্তাহিক দু,দিনে সুখজান বিবি হলুদ হাটে পড়েথাকা হলুদের টুকরো কুড়িয়ে নিজের সাথে থাকা থলেতে ভরেন।তার কুড়ানো কাঁচা এ হলুদ বাড়িতে নিয়ে পানি ভালোভাবে পরিষ্কার করে তা রোদে শুকাতে দেন। প্রতি মাসে সাপ্তাহিক ৮টি হাটের দিন যে হলুদ তিনি সংগ্রহ করে পান তা রোদে শুকিয়ে আবার ওই হাটেই বিক্রি করেন। এতে করে তার প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মত মাসে আয় হয়। যা দিয়ে তার ওষুধের খরচের টাকা হয়ে যায়। সুখ জানের বড় মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে মা মেয়ের খাওয়া চলে যায়। বয়স্ক ভাতা ছাড়া সরকারি আর কোন সাহায্য সহযোগিতা জোটে না অসহায় নিঃস্ব সুখজান বিবির কপালে। সুখজান বিবি  কথা হলে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেক কষ্টে দিন কাটে আমার। শরীরে বাসা বেধেছে নানা রোগ। চিকিৎসা কিংবা ওষুধ খাওয়ার টাকা নেই আমার। দু,বেলা দুমুঠো ভাতের জোড়ার করতেই আমার হিমশিম খেতে হয়। রাতে ঘরে থাকার ব্যবস্থা ভালো নেই। সেদিন ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম বেজিতে এসে হাতে কামড় দিয়ে। এখন ঠিকমতো চিকিৎসাও নিতে পারছি না। হলুদ খুটে যা আয় হয় তা দিয়ে চলেনা। আল্লাহই চালাচ্ছে মনে করতি হবে। হলুদ ব্যবসায়ি মুশফিকুর রহমান মাহমুদ বলেন, সুখজান বিবি হলুদ হাটায় দীর্ঘদিন ধরে হলুদ পরিস্কারে কাজ করতেন, বয়স বেড়েছে বিধায় এখন আর ওই কাজ করতে পারেন না। তবুও ভিক্ষা না করে হাটে আসা হলুদ ব্যবসায়িদের হলুদ  বস্তা ভরে নিয়ে যাওয়ার পরে যে সকল ছোট ছোট হলুদের টুকরা পড়ে থাকে সেগুলো কুদিয়ে সে বাড়তে নিয়ে যায়। জমানো হলুদ বিক্রি করে সামান্য আয় হয়তার। এভাবেই চলছে তার জীবন। আমরা পরিচিত জন অনেকে তাকে মাঝে মাঝে সহযোগিতা করে থাকি। সমাজের বৃত্তবান ব্যক্তিদের উচিত সুখ জান বিবির মত অসহায় হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়ানো।  কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, সুখ জান বিবিকে আমরা সরকারি সকল সুযোগ সুবিধার আওতায় আনব। খোঁজখবর নিয়ে সংগ্রামী এই নারীর প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিব বলে আশা করি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে