মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে দুই পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্রতর হচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ নতুন শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন ঘোষণা দিয়েছে, তারা মার্কিন কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বড় ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এই শুল্ক আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, "যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক বৃদ্ধি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।"
শুধু শুল্ক আরোপেই থেমে থাকেনি চীন। দেশটির বাজার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক রাজ্য প্রশাসন ঘোষণা করেছে, তারা গুগলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেডের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-মনোপলি (একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ) তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি মার্কিন কোম্পানি ক্যালভিন ক্লেইনের মূল প্রতিষ্ঠান পিভিএইচ কর্প এবং বায়োটেক প্রতিষ্ঠান ইলুমিনাকে ‘অবিশ্বস্ত সংস্থা তালিকা’তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা বাড়ছে। হংকং শেয়ারবাজারে ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ডলার শক্তিশালী হলেও চীনা ইউয়ান দুর্বল হয়েছে, যা অস্ট্রেলিয়ান ডলারকেও প্রভাবিত করেছে।
বিশ্লেষক গ্যারি এনজি বলেন, "মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি সম্ভব হলেও চীনের ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশ জটিল। এমনকি যদি দুই দেশ কিছু বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায়, তবুও শুল্ক নীতিকে ভবিষ্যতে পুনরায় ব্যবহার করা হতে পারে, যা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।"
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হলেও চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন কোনো ছাড় দেয়নি। এছাড়া, ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপরও শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দুই দেশ দ্রুত সমঝোতায় না পৌঁছায়, তাহলে এই বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন এবং বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।