বরিশালে আমু ও সাদিকের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) :
| আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম | প্রকাশ: ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৩:৪০ পিএম
বরিশালে আমু ও সাদিকের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

শেখ হাসিনার ভাগ্নে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর নগরীর বাড়িতে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেছে উত্তেজিত ছাত্র জনতা।

এসময় বুলডোজার দিয়ে উভয় নেতার বাড়ির সামনের অংশ ও সীমানা প্রাচীর গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেশকিছু আসবাবপত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত একটানা এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

প্রতক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১১ টার দিকে নগরীর কালিবাড়ি রোড ঘিরে পুলিশের লক্ষণীয় উপস্থিতি ছিল। রাত ১২ টার দিকে সেনাবাহিনীরি সদস্যরা কালিবাড়ি রোডে আসেন। একইসময় ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনমুখী হন ছাত্র-জনতা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়কের দুইপাশ থেকেই প্রবেশে বাঁধা প্রদান করেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঁধা উপেক্ষা করে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনের ভেতর ঢুকে যান। এসময় তারা জনমানবহীন বাড়ির বিভিন্ন তলায় গিয়ে পরে থাকা ভাঙাচোরা আসবাবপত্র ও প্লাস ভাঙচুর করে। পরে শিক্ষার্থীরা বুলডোজার নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাঁধা প্রদানের চেষ্টা করে। শিক্ষর্থীরা বাঁধা উপেক্ষা করে সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনের সীমানা প্রাচীর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে বাসভবনের সামনের অংশ, গাড়ির গ্রেজ ও সেডের অংশবিশেষ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এর আগে বাসভবনের দ্বিতীয় তলা ও ছাদে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়। তবে শিক্ষার্থীরা তা অল্প সময়ের ব্যবধানে নিভিয়ে ফেলে ঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুর কার্যক্রম চালায়।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, কালিবাড়ি রোডে সাদিকের বাড়িটি ছিল টর্চারসেল। মানুষকে এখানে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। তাই জনগণের ক্ষোভ এতোটাই ছিল যে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাঁধা উপেক্ষা করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

সূত্রমতে, কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবত ভবন ভাঙচুরের পর রাত দেড়টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নগরীর বগুরা রোডস্থ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনেও ভাঙচুর চালায়। সেখানে একটি টিনের ঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ায় পাশাপাশি টিনের ঘর লাগোয়া একতলা ভবনের সামনের অংশ এবং পাশের দোতলা ভবনের সামনের অংশ ভাঙা হয়। পরে উঠানের সীমানা প্রাচীর ও বাড়ির সামনের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ভেতরে থাকা বিভিন্ন মালামাল বাড়ির সামনে জড়ো করে তাতে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া কিছু মানুষ ওই সময় বিভিন্ন মালামাল লুট করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাতে বাঁধা দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, এই বাড়িতে বসে আমির হোসেন আমু বরিশাল ও ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কলকাঠি নারতো। যার আলামত হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পাওয়া গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহবায়ক শহীদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের আস্তানা ভেঙে দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, গতবছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরের পর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কালিবাড়ি রোডের বাসভবন এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর বগুরা রোডের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছিলো বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ওইসময় সাদিক আব্দুল্লাহর বাসায় আটকে পরে সাবেক কাউন্সিলরসহ তিনজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে