যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ভারতীয় রেস্তোরাঁয় অভিযান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম
যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ভারতীয় রেস্তোরাঁয় অভিযান

লন্ডন: যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে ভারতীয় রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। অভিবাসন নীতির কঠোর বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, যা অনেকাংশে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে জানুয়ারি মাসে রেকর্ডসংখ্যক ৮২৮টি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। এ সময় ৬০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই অভিযানগুলোর বড় অংশ রেস্তোরাঁ, টেকঅ্যাওয়ে, ক্যাফে এবং খাদ্য ও পানীয় শিল্পে কেন্দ্রীভূত ছিল। উত্তর ইংল্যান্ডের হাম্বারসাইডে একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার এবং চারজনকে আটক করা হয়েছে।

"আইন কঠোরভাবে মানতে হবে"স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, "অভিবাসন আইন কঠোরভাবে মানতে হবে। বহুদিন ধরে অবৈধ অভিবাসীদের কাজ করানো ও শোষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আর তা চলবে না।" তিনি আরও বলেন, "এই শিথিলতা মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেলছে, যেখানে তারা ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার মতো ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এটি আমাদের অর্থনীতি ও অভিবাসন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।"

সরকারের "শো, নট টেল" কৌশলপ্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সরকার অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে "শো, নট টেল" কৌশল গ্রহণ করেছে। সরকারের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অবৈধ অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে সীমান্ত বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ চার্টার বিমানে তুলছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চারটি অভিবাসন প্রত্যাবাসন ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে, যেখানে ৮০০-এরও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া, মাদক পাচার, চুরি, ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদেরও এই অভিযানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সরকার বলছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অভিবাসন আইন ভঙ্গকারীদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

নিয়োগকর্তাদের জন্য কড়া শাস্তিহোম অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে ১,০৯০টি স্থানে জরিমানা আরোপ করা হয়েছে, যেখানে প্রতি অবৈধ কর্মীর জন্য নিয়োগকর্তাকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হয়েছে।

ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালক এডি মন্টগোমারি বলেন, "আমাদের কঠোর অভিযানের ফলে যারা অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করছে, তারা বুঝতে পারবে যে আইন থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। অবৈধ অভিবাসীরা প্রায়ই অমানবিক পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য হয়, তাই আমরা তাদের সুরক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখছি।"

নতুন সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন বিলএই অভিযান এমন সময় চালানো হচ্ছে যখন লেবার সরকারের বর্ডার সিকিউরিটি, অ্যাসাইলাম ও ইমিগ্রেশন বিল পার্লামেন্টে দ্বিতীয় পাঠের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই নতুন আইন অপরাধী চক্র ভেঙে দেওয়া ও সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে। এতে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আসা ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন জব্দ করার মতো নতুন ক্ষমতা দেওয়া হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।

বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি এই বিলকে "দুর্বল" আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি "নৌকা থামাতে পারবে না" এবং আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কনজারভেটিভ পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেন, "নতুন নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর অভিবাসন সংস্কার আনছে। আমাদের দেশ আমাদের ঘর, হোটেল নয়।"

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়াঅভিযান এবং নতুন আইনের বিরুদ্ধে সমালোচনাও উঠছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই কঠোর পদক্ষেপ অভিবাসীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে এবং শোষণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে সরকার বলছে, এই পদক্ষেপ অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক হবে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরকার এই সমস্যার সমাধানে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে