সাতক্ষীরা জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু

এফএনএস (এস.এম. শহিদুল ইসলাম; সাতক্ষীরা) : | প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু

৫ বছর পর গত ২ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নতুন কমিটিতে রহমতউল্লাহ পলাশকে আহ্বায়ক ও আবু জাহিদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া আবুল হাসান হাদি, তাসকিন আহমেদ চিশতি, ড. মনিরুজ্জামান ও মো. আক্তারুল ইসলামকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ১১ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশে সৈয়দ ইফতেখার আলীকে আহ্বায়ক ও আব্দুল আলীমকে সদস্য সচিব করে ৩৫সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির ওপর নির্দেশনা ছিল তিন মাসের মধ্যে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করার। কিন্তু পাঁচ বছরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সদ্য বিলুপ্ত কমিটি। জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেওয়ার আগে রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলার কমিটির অধীন সব উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ ও কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন সময় মোকাবিলা করতে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের ওপরেই 'আস্থা' রাখছে বিএনপি। বিগত চার দশকে কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়া, নেতাদের দলত্যাগ, আন্দোলনে 'যথাযথ' ভূমিকা না রাখা এবং ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে 'আঁতাত' করার তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে এমন কৌশল গ্রহণ করেছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের আসীন করা হয়েছে। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সামরিক আইনে ক্ষমতাসীন থেকেই রাজনৈতিক দল গঠনের যে প্রক্রিয়া শুরু করেন তা-ই অল্পদিন পরে বিএনপির জন্ম দেয়। তখন বাম-ডান-মধ্য বিভিন্ন চরিত্রের অন্যান্য দল থেকে অনেক লোক এসে বিএনপিতে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী চার দশকে একাধিকবার রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ক্ষমতায় ও ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় ছাত্রদল ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে অনেক তরুণ পোড় খাওয়া রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গড়ে ওঠেন। তাদেরই একজন আবু জাহিদ ডাবলু। তিনি সাতক্ষীরা শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার মরহুম মুন্সি আব্দুর রশিদ ও হোসনেয়ারা বেগম দম্পতির সন্তান। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, এলএলবি পাশ। পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো তাঁর সংগ্রামী জীবনের কিছু কথা। আবু জাহিদ ডাবলু সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিবের হাল ধরেছেন। এরআগে তিনি সাতক্ষীরা জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়েছেন। নিজ কর্ম দক্ষতায় ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় অর্জন করেছেন প্রশংসা। জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে জয় করেন নেতা-কর্মীদের আস্থা। জেলা বিএনপির সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রদলকে পরিণত করেছিলেন আদর্শ ছাত্র সংগঠনরূপে। সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছিলেন। এর আগে তিনি সাতক্ষীরা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৪ শিক্ষাবর্ষে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ সংসদ জিএস পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। পৌর ছাত্র দলের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক নেতৃত্ব দেন। তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সংগঠনকে দাঁড় করান একটি শক্ত ভিত্তির উপর। এছাড়া সাবেক সভাপতি (নির্বাচিত), সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের ইয়ার কমিটি। সাতক্ষীরা পৌরসভাধীন ২নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কুড়িয়েছিলেন প্রশংসা। এরআগে  সাতক্ষীরা পল্লী মঙ্গল হাইস্কুল ছাত্রদলের সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন ছাত্রজীবনে। তিনি স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। বিগত পতিত সরকারের ১৬ বছরে তিনি ৩৮টির অধিক মিথ্যা ও যড়যন্ত্রমূলক নাশকতার মামলায় আসামী হযেছেন। ৬ (ছয়) বার কারাবরণ করেছেন। সাতক্ষীরার রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর রয়েছে নতুন অভিজ্ঞতা। একান্ত আলাপে  সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু বলেনÑবর্তমান সাংগাঠনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিগত সময়ে ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন- যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি মূল দলে এসেছেন। ফলে দল রাজপথের আন্দোলনের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী দিনে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


আমি মনে করেন, সাবেক ছাত্রদল, যুবদল, কৃষকদলের নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে আসার বিষয়টি ইতিবাচক। ছাত্রদল নেতারা রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত থেকে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। দলের প্রতিও তাঁরা অনুগত। ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে আগামী দিনে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবেক নেতারা নিষ্ফ্ক্রিয় নয়। তারাও সক্রিয়। তবে তাদের অনেকে বয়স্ক ও অসুস্থ। তাঁরাও তাঁদের বর্তমান অবস্থান থেকে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে দলকে শক্তি জোগাচ্ছেন। আবু জাহিদ ডাবলু বরেনÑ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ চার দশকে জেনারেল এরশাদের আমলসহ বেশ কয়েকবার ভাঙনের কবলে পড়েছিল দলটি। প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্পধারা এবং সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপির মতো দলের জন্ম হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কার প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে আরেক দফা ভাঙনের কবলে পড়ে। সেই বিভেদের রেখা এখনও মুছে যায়নি। বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য দলে পদহীন অবস্থায় রয়েছেন। এভাবে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও আসে দলটি। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বিএনপিকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কখনও ভাঙেনি। তিনি মনে করেন, দলের জন্য এখন মাহেন্দ্রক্ষণ। এখনই বিএনপির উঠে দাঁড়ানোর সময়। দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার সময়।  আমাদের দল গোছানো এবং দলকে শক্তিশালী করার সময়। আবু জাহিদ ডাবলু বলেনÑবিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অনেক মেধাবীকে রাজনীতিতে যুক্ত করেছিলেন। এতে তাঁর দলটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ দলে পরিণত হয়েছিল। যোগ্য, আদর্শবান, নৈতিকভাবে সৎ চরিত্রের অধিকারীদের দলের নেতৃত্বে আনা উচিত মনে করেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরা জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছেন। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এবং মানুষকে আকৃষ্ট করতে আধুনিক ও মেধাবী রাজনীতিবিদ প্রয়োজন। বিএনপি সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে