উত্তর জনপদের গাইবান্ধায় পৌষের শুরুতেই হিমেল বাতাস আর শৈত্য প্রবাহে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। শীতের প্রকোপ এবার কিছুটা বিলম্বে দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর সাধারণত নভেম্বরে কিংবা ডিসেম্বরের শুরুতেই শীতের দেখা মিললেও চলতি বছর চলছে কিছুটা ব্যতিক্রম।
গত চার দিন ধরে শৈত্য প্রবাহের পাশাপাশি ভোরের হিমেল বাতাসে নাগরিক জীবনে স্পষ্টভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে শীতের দাপট। সকাল হলেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। সারা রাত ঘনকুয়াশা যেন হালকা বৃষ্টির মত ঝড়ে চলছে ভোর পর্যন্ত । সঙ্গে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস, যা মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষ করে সকালের দিকে বাইরে বের হতে কষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের। সকালে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
শীতের এই প্রকোপে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া দিন মজুর। ভোর থেকেই কাজে বের হতে হয় দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, কৃষিশ্রমিক ও বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষদের। ঠিক সেই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে হিমেল বাতাসের তীব্রতা। অনেকেই পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগার আশঙ্কা করছেন।
বেলা ১১-১২ টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও বাতাসে ঠান্ডা ভাব থেকেই যাচ্ছে। আবার সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শীতের প্রকোপ নতুন করে বাড়তে শুরু করে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা আরও নেমে যাচ্ছে, ফলে ঘরের ভেতরেও শীত অনুভূত হচ্ছে।
শীতের কারণে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, শিশু ও বয়স্কদের অবশ্যই গরম কাপড় পরিধান করতে হবে এবং অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া খুব ভোরে বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি ও জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
খামার বোয়ালি গ্রামের রিক্সাচালক জয়নাল আকন্দ বলেন, পৌষের প্রথম সপ্তাহ পার হতে না হতেই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সকাল সন্ধ্যার হাত-পা টাটানো শীত অনুভব হচ্ছে।রিক্সা চালানোর সময় হাত ঠান্ডায় অবস হয়ে যায়।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডা: সোহেল বলেন, শীতে প্রত্যেককেই সতর্ক থেকে গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। বিশেষ করে বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ঠান্ডা ও বাশি খাবার পরিহার করতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও। গাইবান্ধা শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, টুপি ,মুজা ও শীতবস্ত্র কিনতে দেখা যাচ্ছে নানা বয়সী মানুষকে।
বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় গরম কাপড় সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
চলমান শীত মৌসুমের আগামী দিনগুলোতে উত্তরাঞ্চলে শীতের এই পরিস্থিতি আরও জোরালো হতে পারে। ফলে শীত মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছেন সচেতন মহল।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, কম্বল ক্রয়ের জন্য জেলার প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ছয় লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। তারা কম্বল কিনে বিতরণ করছেন। এছাড়া মজুদ কিছু কম্বলসহ এপর্যন্ত জেলায় ২২ হাজার ৬০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) যাদব সরকার বলেন, শীতের শুরু থেকেই জেলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ শুরু করা হয়েছে, এটি অব্যহত থাকবে। চলতি সপ্তাহে বেশ কিছু কম্বল আরো পাওয়া যাবে।