‘কেডা এবার হ্যামাক ঠান্ডার কাপড় দিবে’

এফএনএস (মোঃ ইমদাদুল হক; সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা) : | প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম
‘কেডা এবার হ্যামাক ঠান্ডার কাপড় দিবে’

        এবার তো এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান নাই, কেডা হ্যামাক ঠান্ডার কাপড় দিবে। এলাই যে ঠান্ডা,  হামরা কেমন করি বাঁচমু, সেই চিন্তাই আছি। ভোট আইলে তো সবাই কয়, এটা দিমু, সেটা দিমু, এখন তো হ্যামার ঘরোক কেউ দেখবার আইসে না। নেম্বর, চেয়ারম্যানরা কয় সরকার না দিলে হামরা কই থাকি ঠান্ডার কাপড় দিব। আজ থাকি আগুন জ্বলেয়া নাতি-নাতনিক নিয়ে কষ্ট করি রাত দিন পার করছি। ঠান্ডা আইলে হ্যামার ঘরে খুব কষ্ট। কথাগুলো বলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের ডাঙ্গার চরের কাইচ মতি বেগম।

         উত্তরের জনপদে চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই রোববার হতে ঘন কুয়াশা, কন কনে ঠান্ডা, হিমেল হাওয়া ও শৈত প্রবাহের কারনে অসহায় ও ছিন্নমুল পরিবারগুলো কাবু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা চরাঞ্চলের ভাসমান পরিবারগুলো ঠান্ডায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সকল কার্যক্রম। ঘন কুয়াশা এবং ঠান্ডায় অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ীরা যথা নিয়মে কর্মস্থলে যেতে পারছে না। যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। ঠান্ডার কারনে নানাবিধ রোগব্যধির প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ওষুধের দোকানগুলো রোগির ভিড় লক্ষা করা গেছে।  

          জানা গেছে, একটি পৌরসভাসহ পনের ইউনিয়নে কমপক্ষে ৬০ হাজার ছিন্নমুল পরিবার রয়েছে। নিন্ম আয়ের এই পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে অসহনীয় ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিমান একেবারেই অপ্রতুল। দিনমজুররা এবং চরের ছিন্নমুল পরিবারগুলো খড় কুঁটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণ করছে। বিশেষ করে বৃদ্ধা-বৃদ্ধা, শিশু ও প্রসূতি মা’রা নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। 

        রামডাকুয়া  গ্রামের দিনমজুর লুৎফর রহমান বলেন ঠান্ডার কারনে মাঠে কাজ করা সম্ভাব হচ্ছে না। মাঝে মাঝে খড় কুঁঠো জ্বালিয়ে হাত-পা গরম করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে কাজকর্ম ছেড়ে দিতে হবে। সরকারি ভাবে এখন কোন প্রকার শীতবস্ত্র পাইনি।

         হরিপুরের লখিয়ার পাড়াচরের সোলেমান মিয়া বলেন, গত চারদিনের ঠান্ডায় চরের মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে বয়বৃদ্ধা, শিশু ও গর্ভবতী মা’দের নিদারুন কষ্ট হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার শীতবস্ত্র পাই নাই। ঠান্ডার কারনে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। অনেকে ঘরের মধ্যে হাত-পা গুিিটয়ে বসবাস করছে। 

        তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। তাঁর ইউনিয়নে ছিন্নমুল মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ৬ হাজার। শীতার্ত মানুষের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে চেয়ারম্যান ও নেম্বারদের। শীতে যে ভাবে জেঁকে বসেছে, তাতে করে শীতবস্ত্রের চাহিদা মেটাতে না পারলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তিনি প্রশাসনের নিকট অতিদ্রুত চাহিদা মোতাবেক শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানিয়েছেন।

        উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিয়ার রহমান বলেন চলতি মৌসুমেগত চারদিন ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা দেখা দিয়েছে। সরকারি ভাবে ৯৪১ পিস শীতবস্ত্র কম্বল এবং ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে শীতার্ত মানুষের চেয়ে শীতবস্ত্রের পরিমান অনেক কম।

         উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. আতিয়ার রহমান সোহাগ বলেন, প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে হাপানি, এ্যজমা, নিমোনিয়া, পেটের পীড়া, স্বদি কাশিসহ নানাবিধ রোগীর সংখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসের তুলনায় রোগীর সংখ্যা তুলনামুলক হারে বেড়ে গেছে। মুলত ঠান্ডর কারণে এসব রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু, ও প্রসূতি মা’রা বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

        উপজেলা নিবার্হী অফিসার ঈফফাত জাহান তুলি বলেন, শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য মন্ত্রনালয় হতে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শীতবস্ত্র ক্রয় করে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে অসহায় শীর্তাত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।  

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে