বৈষম্যবিরোধী জনগণের আকাঙ্ক্ষার শাসন পদ্ধতি বাস্তবায়নে রংপুরসহ দেশে নয়টি প্রদেশ ও প্রাদেশিক সরকার গঠন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণের প্রতিনিধিত্বে সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন, জাতীয় সরকার গঠন এবং এক ব্যক্তির দুই ভোট পদ্ধতি চালুর দাবি জানিয়েছে প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদ। গতকাল রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর নগরীর কাচারি বাজার জিরো পয়েন্টে আয়োজিত মানববন্ধন সমাবেশ থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান পরিষদের নেতারা।
রংপুর প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি’র সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুস সাদেক জিহাদী, সহ-সভাপতি মনসুর আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবিএম মশিউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এজাবুল হক, সদস্য আশরাফুল আজম চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে প্রদেশ গঠনের বিকল্প নেই। দেশে প্রাদেশিক সরকার না থাকায় জনগণ বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলের সমস্যাগুলো সংসদে উঠে আসছে না। দেশের বিভিন্ন এলাকা সুবিধাবঞ্চিত হওয়ায় পিছিয়ে পড়েছে। দেশে বৈষম্য দূরীকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রংপুরসহ ৯টি প্রদেশ ও প্রাদেশিক সরকার গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সমাবেশে সংবিধান সংশোধন ও রাষ্ট্র সংস্কার, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে রোডম্যাপ ঘোষণাসহ কল্যাণকর ও টেকসই রাষ্ট্রবিনির্মাণে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়।
বিগত সময়ের মতো বর্তমানেও রংপুর বিভিন্ন দিক থেকে আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, গত আট মাসে আমরা কি পেয়েছি। বলা হয়েছিল রংপুর হবে এক নম্বর। কিন্তু বরাদ্দ প্রাপ্তির বেলায় আমরা পিছিয়ে থাকছি। আমাদের অঞ্চল থেকে কোনো উপদেষ্টা নেই। আমাদের দাবি নিয়ে কথা বলার মতো নেতৃত্ব নেই। আমরা রংপুরের মানুষ শুধু জীবন দিবো, আন্দোলন-সংগ্রাম করব। চীনের উপহারের এক হাজার শয্যার হাসপাতাল রংপুরে হবার কথা ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা অন্য জেলায় নেয়া হচ্ছে। এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
মানববন্ধন সমাবেশ শেষে দাবি আদায়ে রংপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বরাবর স্মারকলিপি দেন প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য; পুরোনো চার বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। ক্ষমতার প্রত্যর্পণ বিবেচনায় দেশে বিশাল জনসংখ্যার পরিষেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে এ প্রস্তাব করা হয়।
এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সুপারিশসহ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তুলে দেন কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে নয়াদিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ অর্থাৎ ‘রাজধানী মহানগর সরকার’ গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন।