বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার দিকনির্দেশনা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারকে “ইতিবাচক ও আন্তরিক পরিবেশে” অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
গত ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশের সঙ্গে ‘বাস্তবভিত্তিক, গঠনমূলক ও জনগণ-কেন্দ্রিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী বৈঠক-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে জানান, মোদী বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস বাস্তবিক ফল বয়ে এনেছে, এবং সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমার মনে হয়েছে, একটি ইতিবাচক পরিবেশে এই বৈঠক হয়েছে এবং উভয়পক্ষই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও স্থিতিশীল করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।”
বৈঠকে এমন সব বক্তব্য পরিহারের ওপর জোর দেওয়া হয়, যা পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবেশকে উত্তপ্ত করতে পারে। মোদী বিশেষভাবে বলেন, "পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো বক্তব্য পরিহার করাই সর্বোত্তম।"
এই প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা নিজেরাও একমত যে, উত্তেজনাকর বক্তব্য দেওয়া কারও জন্যই উচিত নয়। এটি একতরফা কিছু নয়। হয়তো আমাদের কেউ কেউ কিছু বলে থাকেন, যা বলা উচিত হয়নি, আবার একই ধরনের কথা আমরা ভারতের দিক থেকেও শুনি— বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং মাঝে মাঝে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকেও। সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে উভয়পক্ষেরই এমন বক্তব্য এড়িয়ে চলা জরুরি।”
বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রের প্রশ্নও আলোচনায় এসেছে। মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কথা ভারত সবসময় বলে। তবে এ সরকার নিজের পক্ষ থেকেই বলেছে, যে দায়িত্বগুলো তাদের আছে, তা শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অঙ্গীকার তারা করেছে। এটা সরকারের পক্ষ থেকেই একটি পরিষ্কার বার্তা।”
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, “বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা একটি পূর্বাভাসযোগ্য পরিবেশ চায়। তারা জানতে চান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় যাচ্ছে, নতুন সরকার কবে আসবে ইত্যাদি। এটি তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গেও জড়িত।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনার সত্যতা স্বীকার করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, তবে এখনো এ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
ভারতের ভিসা ইস্যু নিয়েও আলোচনার ইঙ্গিত দেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “ভিসা দেওয়া বা না দেওয়া ভারতের নিজস্ব সার্বভৌম অধিকার। তবে যদি ভারত না দেয়, তাহলে মানুষ অন্য কোথাও যাবে— সেটাও এখন বাস্তবতা।”
তবে ভারতের সঙ্গে জনগণ-কেন্দ্রিক সম্পর্ক বজায় রাখতে ভিসা প্রক্রিয়াকে সহজ করার পক্ষে মত দেন তিনি। “আমরা চাইবো, ভারত ভিসা প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করুক। এতে উভয় দেশেরই স্বার্থ রক্ষা পাবে। এমনকি আমরা জানি, ভিসা কঠিন হওয়ায় কোলকাতার অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”