প্রতি বছর ঈদ এলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলা মানুষের চেনা এক দুর্ভোগের গল্প শুরু হয়। যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া, ট্রেনের টিকিট সংকট, দুর্ঘটনার ঝুঁকি, মহাসড়কে ডাকাতি এসব যেন ঈদযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এবারের ঈদযাত্রাও ব্যতিক্রম হবে না, বরং আগের তুলনায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ঢাকার প্রবেশ ও বাহিরমুখী সড়কগুলোর ভয়াবহ যানজটের পূর্বাভাস আগেই দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আমিনবাজার, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার, ধোলাইপাড়সহ ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ১৫৯টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ বেড়ে গেছে, যা ঈদযাত্রাকে আরও অনিরাপদ করে তুলবে।
বিশেষ করে প্রবাসীদের গাড়ি এসব ডাকাতির প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অনেক রাস্তায় এখনো খানাখন্দ রয়ে গেছে। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কিছু অংশ এবং লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের অবস্থা ভয়াবহ। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যে, ঈদের আগেই এসব সংস্কার করা হবে, বাস্তবে তা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। শুধু সড়কপথ নয়, রেলপথেও চরম বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে। যাত্রীদের চাপ সামলাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা একদিকে হয়তো কালোবাজারি রোধ করতে পারে, তবে অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলের প্রযুক্তি-অসচেতন মানুষের জন্য বাড়তি দুর্ভোগ তৈরি করবে। এ ছাড়া গত বছর ঈদে ৮ থেকে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু থাকলেও এবার তা কমিয়ে পাঁচ জোড়া করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
এতসব সমস্যার মাঝে আশার কথা হলো, যানজট নিরসনে এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ সক্রিয় থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য মাঠে কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে, তবে বিগত অভিজ্ঞতা বলছে, শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগÑসড়ক সংস্কার, বাস মালিকদের লাগাম টেনে ধরা, অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধ করা এবং ডাকাতি-ছিনতাই রোধে কড়া নজরদারি বাড়ানো। ঈদযাত্রা মানুষের আনন্দের যাত্রা হওয়া উচিত, দুর্ভোগের নয়। যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিক পরিকল্পনা ও কঠোর বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসব সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে বাড়ি ফেরা মানুষ স্বস্তির সঙ্গে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারে।