পেঁয়াজের ভরা মৌসুম এখন। এর পরও কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ৩০-৩৫ টাকার পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। অনেকের মতে, বাজারে তদারকি না থাকায় ব্যসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা বাড়বে। কোনো ঘাটতি নেই, তবু পণ্যটির দাম বাড়ছে। আর কারণ হিসেবে মজুত করে রাখা, আমদানির অনুমতি (আইপি) বন্ধ রাখা এবং রমজানে দাম বেশি পাওয়ার আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ বাজারে বেশি সরবরাহ করায় পরিপক্ব পেঁয়াজ বাজারে কম আসার মতো বিষয়গুলোকে দায়ী করছেন পাইকার ও আড়তদাররা। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পেঁয়াজচাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সবাই প্রায় একই কথা বলছেন। তারা বলছেন, জমিতে এখন আর কোনো পেঁয়াজ নেই। সব পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। এসব পেঁয়াজের বেশিরভাগই কৃষক নিজেরা ও মজুতদারেরা কিনে সংরক্ষণ করছেন। ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়বে, সে আশায় বাজারে তুলনামূলক কম পেঁয়াজ আনছেন। এসব কারণে পেঁয়াজের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। শ্যামবাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে, যা রোজার ঈদের আগেও ছিল ২৫ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৫০ টাকা। চলতি সপ্তাহে এই দাম বেড়ে ৪৫ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছে। টিসিবির হিসাবেও কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এদিকে, পেঁয়াজের বর্তমান খুচরা মূল্যকে যৌক্তিক বললেও দাম বৃদ্ধি যেন লাগামহীন হয়ে না পড়ে, সেদিকে নজরদারির পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩২ থেকে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে ৩৬ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। ৩৮ লাখ ২১ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এবার। কোনো রকম ফলন বিপর্যয় ছাড়াই কৃষকের ঘরে উঠে গেছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ। অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে রমজানে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, সেই ফরমুলা অন্য সময়ের জন্য প্রয়োগ করতে হবে। সরকারকে জনগণের কাছে শত্রু বানাতে কারা পেছন থেকে ছুরি মারছে, গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে তাদের শনাক্ত করা জরুরি।