ঋণের অর্থ ছাড়ে সরকারের ওপর কর বাড়ানোর চাপ বাড়াচ্ছে আইএমএফ

এফএনএস এক্সক্লুসিভ : | প্রকাশ: ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:০৪ এএম
ঋণের অর্থ ছাড়ে সরকারের ওপর কর বাড়ানোর চাপ বাড়াচ্ছে আইএমএফ

সরকারের ওপর কর বাড়ানোর চাপ বাড়াচ্ছে দাতা সংস্থা  আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। যদিও চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অপ্রত্যাশিতভাবে কর বাড়িয়েছে। তারপরও বলা হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় সম্ভব। সংস্থাটি চাচ্ছে আগামী অর্থবছরে কর ছাড় কমিয়ে ও করের হার বাড়িয়ে সরকার সংগ্রহ করুক অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা। আর অতিরিক্ত ওই রাজস্ব সংগ্রহ করা না গেলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ইতোমধ্যে মার্চ থেকে বিলম্বিত হওয়া আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি এবং আসন্ন পঞ্চম কিস্তি পাওয়া। যদিও এখনো আইএমএফ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দাবিগুলো জানায়নি। অর্থনীতিবিদ এবং এনবিআর  সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে,  চলতি বছরের জানুয়ারিতে যে কর বাড়ানোতে জনজীবনে ধাক্কা লেগেছে। আর সম্ভব নয় সব কর একসাথে বাতিল করা। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় কিছু কর ছাড় পুরোপুরি তুলে দেয়াও সম্ভব নয়। আর শুধু কর বাড়ালেই রাজস্ব বাড়বে না। বরং কর ফাঁকি রোধ, করজালের সমপ্রসারণ এবং করদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য অটোমেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন করাও জরুরি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা করলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হবে। এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফ যদি ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখে, তাহলে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোও তাদের বাজেট সহায়তা নিয়ে নতুন করে বিবেচনা করতে পারে।

সূত্র জানায়, বিগত ২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির অংশ হিসেবে আইএমএফ ৩০টিরও বেশি সংস্কারের শর্ত দিয়েছে, যার মধ্যে বার্ষিক রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ওই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভ্যাট ও কর বাড়ানোর পরও রাজস্ব আদায় প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছেনি। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়ে মতবিরোধের কারণে চতুর্থ ঋণের কিস্তি ছাড়ে বিলম্ব হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ আগামী জুনে দুটি কিস্তি পাওয়ার আশা করছে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি অর্থ ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে আইএমএফের একটি দল। তারা সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করবে। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পেতে বাংলাদেশকে অন্তত তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, জিডিপির ০ দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতি ও প্রশাসনকে পৃথক করা।

সূত্র আরো জানায়, জিডিপির ০ দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হলে অন্তত ৫৭ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে। আর তা করতে ভর্তুকি কমানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। তাছাড়া বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে মুদ্রা বিনিময় হার। এসব শর্তগুলো পূরণ না হলে বাংলাদেশ নতুন আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। যা শুধু আইএমএফ নয়, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকেও ঋণ প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আইএমএফের ঋণের আশায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি আবারো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হতে পারে বাংলাদেশের। 

এদিকে আইএমএফের চাপ থাকলেও আগামী জুনের আগে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়। এখনই বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে দেশের অবস্থা পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হওয়ার শঙ্কা থাকে। বর্তমানে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। তাছাড়া জিডিপির ০.৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে সরকার ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে। বিশেষ করে ৪৩টি পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা হয়েছে। তবে এখনো রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। 

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ সব শর্ত একসঙ্গে পূরণ করতে পারবে না। তবে দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হতে পারে। বাজেট সহায়তার জন্য আইএমএফ ঋণ লাগবে। যে কারণেই বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফ যৌথভাবে নির্ধারিত দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে