নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ঘটে গেল এক বেদনাদায়ক ও প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা। ভালোবাসা, বিবাহ, তারপর তালাক Ñ সবই যেন এক চুক্তিপত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ল টাকার লেনদেনের খেলায়। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের ওমরগাঁও গ্রামে, যেখানে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বাড়িতে বসে মাত্র ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক তরুণীকে তালাক নিতে বাধ্য করা হয়, যদিও শুরুতে চুক্তি ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার।
এসময় ভুক্তভোগীসহ তার দাদা ও দাদী,স্থানীয় ইউপি সদস্য মোকশেদা ও হালিমা আক্তার, ইউপি সদস্য মো. আব্দুল করিম, আব্দুল আজিজ, আজিজ মেকার, আলম মিয়া, মো. রমজান আলী ও কাজী বারীসহ অন্যান্য লোকজন।
ভুক্তভোগী সেতু আক্তার, প্রেম করে বিবাহ করেছিলেন মো. সুমন মিয়াকে। ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর সামাজিকভাবে উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ১ জুলাই, সুমন মিয়া নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একতরফাভাবে তালাকের ঘোষণা দেন, যা ইসলামী আইন ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ ও অকার্যকর।
এরপর ১২ এপ্রিল রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুল করিমের বাড়িতে বসে ‘সামাজিক সমঝোতা’র নামে এক প্রহসন চলে। সেখানে সেতু আক্তারকে ৮০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে তালাক নিতে বাধ্য করা হয়। অথচ চুক্তি ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার! ভুক্তভোগী স্পষ্ট ভাষায় জানান, “আমি তালাক চাইনি। আমার কাবিনে ছিল ৪ লক্ষ টাকা। অথচ আমাকে জোর করে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হলো।”
সুমনের বাবা রমজান আলী দাবি করেছেন, তিনি ইউপি সদস্যদের হাতে পূর্ণ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোকশেদা ও সদস্য মো. আব্দুল করিমের নিকট জানতে চাইলে তারা মো. রমজানের কাছ থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ভুক্তভোগী সেতুকে নগদ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪০ হাজার টাকা গেল কোথায়? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।
কলমাকান্দা ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি দায়িত্বে থাকা চামেলি খাতুন মতে, শুধু নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তালাক ঘোষণা আইনত অবৈধ ও অকার্যকর। তালাকের ক্ষেত্রে মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ অনুযায়ী স্থানীয় চেয়ারম্যান মাধ্যমে তালাক নোটিশ প্রদান, ৯০ দিন ইদ্দতকাল এবং পুনর্মিলনের সুযোগ দেওয়া আবশ্যক। এসব কিছুই এখানে মানা হয়নি।
এবিষয়ে কলমাকান্দা প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ শামীমের ভাষ্য একজন নারীর সম্মতি ছাড়া, চাপের মুখে নগদ টাকার বিনিময়ে তাকে তালাক দেওয়া শুধু আইন বিরুদ্ধই নয়, বরং মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। ঘটনাটি সমাজের কিছু অংশে প্রচলিত ‘মীমাংসা’ নামের অসামাজিক চাপ প্রয়োগের নগ্ন চিত্র।