দীর্ঘ ১০ মাস যাবৎ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উপজেলার বাঁধঘাট থেকে বগীরহাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের কাজ। সড়কটি উপজেলার বৃহত্তম ও বরগুনা জেলার সাথে বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার। সড়কটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ থাকায় এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো জনসাধারণ চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় বৃদ্ধ, শিশুসহ জীপগাড়ি, আলফা, মটরসাইকেল চালকদের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। উপজেলা এলজিইডি’র অবহেলার কারণে প্রথম ধাপে এই প্রকল্পের সময় পার হলেও ২৫ শতাংশ কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে উপজেলার ছোটবগী থেকে তালতলী বাঁধঘাট পর্যন্ত ৯.৭০০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সংস্কার প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই কাজে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ১০৫ টাকা বরাদ্দ করা হয়। বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই কাজ পায় এবং বাস্তবায়ন করতেছে। এই কাজ গত বছরের ২৫ মার্চ শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারী শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত বছর জুন মাসে ওয়ার্কঅর্ডার পেয়ে ওই সড়কের নভেম্বর মাসে কিছু অংশের কাজের মেগাডাম করে ফেলে রাখেন। কাজের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি। পরে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ এলজিইডি'র উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন ও ঐ কাজের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী গালিফ সত্তার ও মীর সামসুদ্দিনের অবহেলার কারণে ঠিকাদারের লোকজন নিয়মিত কাজ করে না। কয়েকদিন করে ফেলে রেখে চলে যায়। আবার কিছুদিন পরে এসে কাজ করে। এভাবে খামখেয়ালিপনায় মারাত্মক ধীরগতিতে চলছে সড়ক উন্নয়ন কাজ। এতে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুন। সড়কের কাজের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি লোক এই সড়কে দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে। কিছুদিন আগেও দুই শিশু দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়াও এই সড়কটি জেলা সদরের সাথে একমাত্র দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম হওয়ায় সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনসাধারণের বিভিন্ন কাজে জেলায় আসা-যাওয়া করতে হয়। তাছাড়াও শিশু, বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা ও শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
এদিকে কাজের শুরুতেই ঠিকাদার নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এর বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে জানালেও তারা কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলী অফিস ওই কাজের এক কিস্তির বিল ছাড় করেছেন।
স্থানীয় অটো, মটর সাইকেল চালকসহ অনেকে জানান, গত বছরের শেষ দিকে মূল সড়কের দু’পাশ খুঁড়ে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করা হয়। সড়কের দু’পাশ খুঁড়ে দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। কয়েক মাস পর খোয়া-বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করে। এখন আবার জায়গায় জায়গায় ট্রাক্টর দিয়ে মূল সড়ক চাষ দিয়েছে। সেখানে গর্ত হয়ে আছে। যা এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। চলাচলে অনেক কষ্ট হয়। তাই দূর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক নেতারা বলেন, এই এলজিইডি কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এই সড়কের কাজের ধীরগতি। তাই জনসাধারণের ভোগান্তির শেষ নেই। আমরা দ্রুতই সড়কের কাজ বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বশির উদ্দিন বলেন, প্রকৌশলীদের কোনো অবহেলা নেই। আমাদের বিভিন্ন সময়ে চিঠি দিয়ে যাচ্ছে কাজ করার জন্য। শুরুর দিকে স্থানীয়ভাবে কিছু মেগাডাম দেওয়া হয়েছিলো। সেগুলো একটু খারাপ ছিলো। পরে পটুয়াখালী থেকে ভাল মেগাডাম নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সরকার পতনের জন্যও আমাদের কাজের কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন,এখানে আমাদের কোনো অবহেলা নেই। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণেই এই কাজের ধীরগতি হয়েছে। তিরি আরও বলেন ঐ ঠিকাদার কাজের শুরুর দিকে কিছু নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে কাজ করেছেন। তবে আমরা চিঠি দিলে এখন ভালো মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেন। এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের অন্য সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ রইলো। তিনি আরও বলেন,এই কাজের জন্য বেশ কয়েকবার ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন,আমার নিজের কাছেও ঐ সড়কের একাধিক অভিযোগ এসেছে। ওখানে দুইজন শিক্ষার্থী দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে চিকিৎসা নিচ্ছে বরিশাল। আমি এবিষয়ে জেলা মিটিং এ বার বার বলেছি। ওই দপ্তরের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হবে কাজ দ্রুত করার জন্য নয়তো তার লাইসেন্স বাতিলের জন্য বলা হবে। তিনি আরও বলেন এই সড়ক দিয়ে আমিও জেলায় মিটিং এ যাই। খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়।