কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী সদর উপজেলার খরুলিয়ার মোশারফা সুলতানা লাকির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে পুলিশ। ১১ এপ্রিল (শুক্রবার) সকাল ১১ টার দিকে কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রকিব উর রেজা ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ইলিয়াছের নেতৃত্বে একটি টিম কলেজ ছাত্রীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং মাকে সান্তনা দেন। পরে এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলেন।
গত ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে তিনটার দিকে খরুলিয়ার মুনসির বিল নিজ বাড়িতে কলেজ ছাত্রী মোশারফার ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন বাড়িতে মোশারফার মা এবং বোন না থাকার সুযোগে প্রেমিক একই এলাকার ওসমান গনি প্রকাশ বাবু বাড়িতে প্রবেশ করে মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে বলে দাবি পরিবারের।
স্থানিয় ইউপি সদস্য আবদুর রশিদ ও পাশের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরীর উদ্দিন জানান, খরুলিয়ার মুনসির বিল এলাকার মৃত হোছন আলীর মেয়ে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মোশারফা সুলতানা লাকির সাথে একই এলাকার সোদিয়া প্রবাসি জাফর আলমের পুত্র ওসমান গনি বাবুর সাথে দীর্ঘ দিন প্রেমের সম্পর্কের সুবাদে প্রেমিকার বাড়িতে যাতায়াত ছিল। বাবু অপর মহিলার সাথে পুনরায় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ করে মোশারফা। তা নিয়ে দু'জনে মধ্যে সম্পর্কে ছেদ পড়ে। এক পর্যায়ে মোশারফা মোবাইলে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ৯ এপ্রিল রাতে মোশারফার মা তার বড় বোনের বাড়িতে এবং অপর বড় বোন শহরের একটি হাসপাতালে চাকুরির কারনে বাসায় না থাকার সুযোগে প্রেমিক বাবু বাসায় গভীর রাতে প্রবেশ করে মোশারফাকে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে পালিয়ে যায় বলে দাবি মোশারফার মায়ের।
মোশারফার মা ফাতেমা বেগম জানান- আমি বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম। রাত ১ টার দিকে বাবু কল করে বলে আমার মেয়ে কল রিসিভ করছেনা। আপনি খবর নেন। তখন আমার সন্দেহ হয়। রাতে জানতে পারি আমার মেয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মতো নয়। তাকে বাবু মেরে কল না ধরার নাটক সাজিয়েছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
প্রতিবেশী ছৈয়দ নুর হেলালী জানান- ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমাদের ইউপি সদস্য শরীফ উদ্দিন কল করে বিষয়টা জানালে আমি তাৎক্ষণিক আমার স্ত্রীসহ মোশাররফার বাড়িতে এসে দেখতে পায় ৩ টি দরজা খোলা। বাড়ির ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত মোশারফা। পুরো বাড়ি খালি। পা মাটির সাথে লাগানো। মনে হয়েছে এভাবে কেউ আত্মহত্যা করতে পারেনা। পরে পুলিশকে অবহিত করলে রাতে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিনই ময়না তদন্তের পর সন্ধ্যায় লসশ দাফন করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল ১০ এপ্রিল সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রাকিব উর রেজা এবং সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো ইলিয়াছ মোশারফার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে পরিবারের সাথে এবং এলাকার গন্যমান্য লোকজনের সাথে কথা বলেন। তারা এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা তদন্ত করে প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করবেন বলে আশ্বাস দেন। মোশারফার মাকে সান্তনা দেন।
এ সময় দৈনিক কক্সবাজারকে কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো : ইলিয়াছ বলেন- আমরা আন্তরিকতা সাথে প্রতিটি বিষয় তদন্ত করে প্রকৃত সত্য বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি। কথিত প্রেমিক বাবুর ও মোশারফার মোবাইল চ্যাটিং বিষয়ে আমরা বাছাই করে দেখব। হত্যার সাথে জড়িত হলে কোন মতেই ছাড় দেয়া হবেনা। অসহায় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মোশারফার মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে এলাকাবাসী কথিত প্রেমিক বাবুকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান।