ভূমি অফিসগুলোতে অনিয়ম, ঘুসের খবর নতুন নয়। তৃণমূল থেকে ওপরের দিকে বিভিন্ন ভূমি অফিস যেন ঘুসের হাট। পরিহাস হচ্ছে, ভূমিসেবা দুর্নীতিমুক্ত রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগের পরও এই সেবা খাতে দুর্নীতি কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, সেবা খাতগুলোর মধ্যে বিচারিক সেবার পরপরই বেশি ঘুস দিতে হয় যেসব সেবা খাতে, সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে ভূমি খাত। সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছিল। টিআইবি বলছে, ২০২৩ সালে ঘুসের শিকার হয়েছে দেশের প্রায় ৫১ শতাংশ পরিবার (খানা)। সেবা নিতে গিয়ে ২০২৩ সালে খানাপ্রতি ভূমিসেবায় ১১ হাজার ৭৭৬ টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নামজারি, রেকর্ড সংশোধন, দখল নিরসন কিংবা জমির দস্তাবেজ জারি- প্রতিটি ধাপে ঘুস যেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাগজ ঠিক, দলিল সঠিক, খতিয়ান ঠিকঠাক, তবু ফাইল নড়ে না ঘুস ছাড়া। এই দুর্নীতিকে পুষ্ট করে আমাদের নিষ্ক্রিয় প্রশাসন, লোক-দেখানো অভিযান আর দুর্বল রাজনৈতিক সদিচ্ছা। মাঝেমধ্যে গণমাধ্যম কিছু প্রকাশ করে, দু-একজন সাময়িক বরখাস্ত হন, কিছুদিন আলোচনা চলে, তারপর আবার আগের জায়গায় ফিরতে সময় লাগে না। আসলে এসবের গোড়ায় রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব। বেশির ভাগ ভূমি অফিস এখনো ডিজিটাইজড হয়নি। ফলে কাগজপত্র ঘাঁটার ফাঁকেই চলে ঘুসের খেলা। অনলাইনে খতিয়ান কিংবা নামজারির আবেদন করা গেলেও তা শেষমেশ গিয়ে আটকে যায় ‘ম্যানেজ’ করার দরজায়। ভূমি অফিসগুলোতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল রেকর্ড ব্যবস্থা চালু করতে হবে। প্রতি সেবার জন্য নির্ধারিত সময় ও খরচ জনসমক্ষে প্রচার করতে হবে। অনিয়মকে প্রতিরোধ করতে হলে শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, একই সঙ্গে জরুরি মানসিকতার বদল। দেশের ভূমি অফিসে হরেক রকমের জালিয়াতি আর অবৈধ অর্থ লেনদেনের সুযোগ বন্ধ করতে দীর্ঘদিন ধরে নানা কথা চলতে থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিক্রিয়া খুব সামান্যই। দেশের ভূমি নিবন্ধন সেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতি-অনিয়ম বাড়তে বাড়তে এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়ে গেছে। ঘুস নিলে শুধু চাকরিচ্যুতি নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির তৈরি করতে হবে।