সুস্থ-সবল থাকতে শাকসবজি খাওয়ার জুড়ি নেই। ডাক্তার ও পুষ্টিবিদরাও তাই বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন। শাক সবজি রান্না করে খাওয়াই স্বাভাবিক বিষয়।কিন্তু এটিই যেন অস্বাভাবিক কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের আনোয়ার সিরাজীর কাছে। সব ধরনের সবজিই কাঁচা চিবিয়ে খান তিনি। এমনকি ভাত-রুটির মতো কোনো কিছুই মুখে দেন না। ১০ বছর ধরে শুধু কাঁচা শাকসবজি খেয়েই বেঁচে আছেন।
আনোয়ার সিরাজী কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের পূর্ব হাত্রাপাড়া গ্রামের সিরাজ উদ্দীন মাস্টারের ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। পেশায় তিনি একজন কৃষক। পরিবারে এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পেছনে ফসলি জমিতে চলে আসেন আনোয়ার সিরাজী। সেখান থেকে সবজি তুলে সকালের নাস্তা করেন। এরপর নেমে পড়েন জীবিকার তাগিদে। তবে অন্য সবাইকে এভাবে খাওয়া থেকে দূরে থাকতে বলেন তিনি। নিজ জমিনে এক সাথে দু জাতের চাষাবাদ করেন। উন্নত জাতের ঘাস আর দেশিয় প্রজাতির সবজির আবাদ করেছেন। উন্নত জাতের ঘাষ খেতে দেন নিজ গৃহ পালিত পশুকে আর দেশিয় হেইছা খেতে দেখা গেছে। শাক সবজি খেয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি সমাজসেবী হিসেবেও পরিচিত। মানবতার ডাক সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সমাজসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংগঠনটির উদোগে ২১ টি দরিদ্র পরিপারকে ঘরও বেঁধে দিয়েছেন। তার প্রতিভা অনেক।
গানে কবিতায় ও ইসলামী গজল পরিবেশনায় অনন্য।মুখে গান টুটে বাশির সুরে মুগ্ধ গ্রামবাসী। তার ভাষায় "কিশোরগঞ্জে বাড়ি আমার করিমগঞ্জ থানা টুটে বাঁশির সুরে গান গাওয়ার চেষ্টা। এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করে এখন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও কৃষি কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে রাখেন সব সময়। এই ব্যস্ততা না থাকলে হতাশা ঘিরে ধরে অসুস্থতা ভীড় করে। তাই সব সময় গ্রামবাসীকে মাতিয়ে রেখে নিজেও আন্দোলিত হন। জীবনে তার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই মানুষের মুখে হাসি ফুটানো এতেই যেনো অন্যরকম শান্তি পান।
সরজমিনে গিয়ে তার সাথে কথা বলে জানা গেছে গত ১০ বছর ধরে কাঁচা সব শাকসবজি খেতে পছন্দ করেন আনোয়ার সিরাজী। তার খাদ্য তালিকায় রয়েছে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, পালংশাক, চিচিঙ্গা, কপি, করলা, পালংশাক, পুঁইশাক, সিম, সরিষার ফুল, গাজর, টমেটো, মুলা, কাঁচামরিচ, পেঁপে,ডাটাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। খেতে পারেন কাঁচা মাছ ও মাংসও ।
কাচা শাক সবজি খাওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, গত ১০ বছর আগে মরণব্যাধি এক রোগে আক্রান্ত হলে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দেন ডাক্তার ও পরিবারের সদস্যরা। তবে প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খেলে হয় তো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারেন- ডাক্তারের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে প্রথমে রান্না করে খাওয়া শুরু করলেও একপর্যায়ে কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর থেকে সব শাকসবজি কাঁচা খেয়ে যাচ্ছেন। এতে সুস্থভাবে বেঁচে আছেন তিনি।
আনোয়ার সিরাজীর চাচা শাহাবুদ্দিন আহামেদ বলেন, মানুষ তো কত কিছুই খায়। কিন্তু সেগুলো রান্না করে। ভাতিজা আনোয়ারের ক্ষেত্রে ভিন্ন। এমন লোক আমি কখনো কোথাও দেখিনি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম শরীরের ক্ষতি হয় কি না। তিনি বললেন, তার কোনো ক্ষতি হয় না। তিনি সব ধরনের শাকসবজি কাঁচা খেয়ে ফেলে। তবে তার শারীরিক কোনো ক্ষতি হতে দেখিনি আমরা। সে খেয়ে ভালোই আছে।
আনোয়ার সিরাজী বলেন, আমার অসুস্থতা দেখে ডাক্তার আমাকে বলেছিল আমি ১০-১৫ দিন বেঁচে থাকব। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি এখনও বেঁচে আছি। আমাকে দেখে মানুষ ভয় পেত। ১০ বছর ধরে কাঁচা শাকসবজি খেয়ে যাচ্ছি। দেশের এমন কোনো শাকসবজি নেই যা আমি কাঁচা খেতে পারি না। কাঁচা শাকসবজি না খেলে আমার শরীরে সমস্যা হয়। প্রথমে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী বাধা দিয়েছে। পরে তারা দেখল খেলে কোনো সমস্যা হয় না। তার জন্য আর নিষেধ করেনি।
তিনি আরও বলেন, শাকসবজি যত বেশি খাই আমার পেট তত বেশি ভালো থাকে। আমাকে ডাক্তার বলেছিল রান্না করে শাক-সবজি খাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি কাঁচা খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলেছি। প্রথমে দুই বছর শুধু পেঁপে ও বেল খেয়েছি। একটা সময় বেল না পেয়ে বেলের পাতা পেট ভরে খেয়েছি। আমি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রেশার সবসময় ৫০-৬০ থাকে। রক্তের সমস্যা থাকায় বেঁচে থাকার তাগিদে খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ডাক্তার না করেছে কিন্তু কাঁচা না খেলে ভালো লাগে না। এলাকাবাসী সবাই জানে। এখন যে অবস্থা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাঁচা শাকসবজি খেয়ে যেতে হবে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ আবিদুর রহমান ভূঞা বলেন, এমনভাবে কাঁচা শাকসবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এতে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে রান্না করে খাবার খেলে খাদ্য গুণাগুণগুলো পাওয়া যায়। কাঁচা শাক-সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও ডিম থাকতে পারে। এ থেকে তিনি পরজীবীতে আক্রান্ত হতে পারেন।
তিনি আরও জানান, শুধু তাই নয়, কাঁচা খাবার খাওয়ার কারণে কিডনি স্টোন হওয়া, লিভার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল। তবে এটি একটি মিরাকেল ঘটনা। মেডিকেল সায়েন্সে এটি সহজে ব্যাখ্যা করা কঠিন।