দেশে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েই চলেছে। হত্যা ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছরে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা। ২০২৩ সালে জার্নাল অব এমার্জিং টেকনোলজিস অ্যান্ড ইনোভেশন রিসার্চে (জেইটিআইআর) প্রকাশিত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের ‘স্টাডি অব চিলড্রেন ক্রাইমস এট আরবান এরিয়াজ ইন বাংলাদেশ’ গবেষণায় বলা হয়, অপরাধে শিশুদের সম্পৃক্ততা বর্তমান সময়ে সত্যিই উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। তাদের মুষ্টিমেয়দের কর্মকাণ্ডে সমাজ আক্রান্ত হচ্ছে, যা অদূর ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর। বর্তমানে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে, বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নাজেহাল হচ্ছে কোনো না কোনো ব্যবসায়ী বা সাধারণ জনগণ। প্রায় এক দশক ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। দিনে দুপুরে বাসাবাড়িতে চুরি, ছিনতাই ছাড়াও এ চক্রটি প্রায়ই তুরাগ নয়ানগর, দলিপাড়া, বাউনিয়া, কামারপাড়া, দক্ষিণখান, ট্রান্সমিটার, মোল্লাবাড়ী, হলান, আজমপুর, আশকোনা, কাওলা, খিলক্ষেত নিকুঞ্জ, উত্তরখান মাদার বাড়ি, মাজারপাড়া, বড়বাগ, চাঁনপাড়া, তেরমুখ, উত্তরখান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাড়া মহল্লার বাসাবাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের মূল্যবান বৈদ্যুতিক তার রাতের আধারে কেঁটে নিয়ে যায়। জানা যায়, কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িত রয়েছে এলাকার বখাটে যুবক, ছিঁচকে চোর, ছিনতাইকারী ও বিপথগামী কিছু স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। প্রায় সময়ই নির্মাণাধীন ভবনের মূল্যবান রড, সিমেন্ট চুরির ঘটনায় এলাকাবাসী চোরকে ধরে থানা পুলিশকে জানালেও চোরের বয়স কম হওয়ার কারণে থানা পুলিশ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। ঢাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর। আগের চেয়ে তাদের দলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। তাদের হাতে এখন পিস্তলসহ আধুনিক ধারালো অস্ত্রও রয়েছে। কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পেলেও সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে এ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাতেগোনা কয়েকটি গবেষণা থাকলেও কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা রোধে যে-সব পরামর্শ দেওয়া হয়, তারও বাস্তবায়ন নেই। ফলে ক্রমে মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে হত্যাযজ্ঞের মতো বড় বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোর। কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা জরুরি। এছাড়া সমাজের বিভিন্ন স্তরে যে ব্যত্যয়গুলো রয়েছে সেগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। আইনের বিষয়গুলোতে আরো কিছু সংযোজন-বিয়োজন প্রয়োজন। পাশাপাশি যারা সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিকদের তাদের এগিয়ে আসা দরকার।