গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা, শিশুহত্যা ও মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। সেই ঢেউ এখন বাংলাদেশেও ভয়াবহ এক মানবিক জাগরণে রূপ নিয়েছে। ৭ এপ্রিল “ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা”কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশজুড়ে এক অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছেÑযেখানে শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে রাজপথ, শহীদ মিনার থেকে মার্কিন দূতাবাসের সামনে পর্যন্ত সোচ্চার হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়Ñএই আন্দোলন আর শুধু কোনো রাজনৈতিক বয়ান নয়, এটি এক গভীর মানবিক আহ্বান। ঢাকার শাহবাগ, টিএসসি কিংবা রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কয়ার, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, সুনামগঞ্জÑপ্রতিটি জেলায় জেলাতেই এক অভিন্ন বার্তা ধ্বনিত হয়েছে: ‘‘গাজায় হত্যাযজ্ঞ চলতে পারে না’’। বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল “শো ইসরায়েল দ্য রেড কার্ড”, “ইনকিলাব ইনকিলাব, আল-আকসা জিন্দাবাদ”কিংবা ফ্রি ফিলিস্তিনÑএই শব্দগুলো প্রতিধ্বনিত করছে একটি নির্যাতিত জাতির মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। এই প্রতিরোধ নিছকই প্রতীকী নয়; বরং এটি বিশ্ব রাজনীতির একপাক্ষিকতার বিরুদ্ধে এক বজ্রকঠিন প্রতিবাদ। বিশ্বজুড়ে যখন রাজনীতি নীরব থাকে, তখন জনগণ হয়ে ওঠে বিবেকের প্রকৃত প্রতিনিধি। বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, একটি জাতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত করে নাÑবিশেষ করে যখন সেই অন্যায় শিশুদের উপর বর্ষিত হয়, যখন হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ বোমায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের এই গণপ্রতিরোধ কেবল ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য সহমর্মিতা নয়, বরং এটি আমাদের নিজেদের বিবেকের অস্তিত্বও জানান দেয়। আমরা আজ গাজার পাশে দাঁড়াচ্ছি, কারণ জানিÑমানবতা যদি আজ গাজায় পরাজিত হয়, তাহলে আগামীকাল তা ঢাকার, কিংবা বিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তের গলিতে মুখ থুবড়ে পড়বে। এবার সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের, এই গণজাগরণকে আরো শক্তিশালী করার। সময় এসেছে সরকারিভাবে ইসরায়েলি নৃশংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার, জাতিসংঘে সোচ্চার হওয়ার। আজ যারা রাজপথে ছিলেন, তারা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লিখে গেলেন একটি বার্তা; মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ রুখে দাঁড়ানোর নামই সভ্যতা।