টাকার অভাবে ছোট হচ্ছে আসন্ন বাজেটের আকার

এফএনএস এক্সক্লুসিভ : | প্রকাশ: ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০৮:১২ এএম
টাকার অভাবে ছোট হচ্ছে আসন্ন বাজেটের আকার

টাকার অভাবে ছোট হচ্ছে আসন্ন বাজেটের আকার। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও ছোট হবে। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেয়া হবে না। তবে যেসব বড় প্রকল্প আছে, সেগুলোতে অর্থায়ন চলমান থাকবে। মূলত সরকারের আয় কম, শুল্ক-কর আদায় না বাড়া এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধে বিপুল অর্থ খরচ হওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার বড় না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার। সংশোধন করে সরকার তা সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়েছিলো। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসন্ন বাজেটে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে জোর দেয়া হবে। নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা কিছুটা বৃদ্ধি এবং শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণের চেষ্টা থাকবে। আর বাজেটের আকার না বাড়লেও সরকারের বেতন-ভাতা, সুদাসলসহ দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ কিছুটা বাড়বে। তবে ওই তুলনায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে খরচ খুব বেশি বাড়ানো হবে না। আবার নানা খাতে ভর্তুকি কমানোও সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হবে।

সূত্র জানায়, আগামী বাজেট টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা। মূলত জাতীয় সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এমনভাবে বাজেট ঘোষণা করা হবে। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হবে নতুন বাজেট। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করে। কিন্তু বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বিগত ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।

সূত্র আরো জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)বাজেটের সিংহভাগ অর্থের জোগান দেয়। চলতি বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে ওই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ৫১ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় খুব বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিগত বছরগুলোর মতো বাজেটের আকার বাড়াতে পারছে না সরকার। ইতিমধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্য লেখার কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাজেট বক্তব্যে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের অংশ সংযুক্ত করতে সব সচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য গত ফেব্রুয়ারিতেই চিঠি দেয়াা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলোর উল্লেখযোগ্য নীতি, আইন ও পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়িত সংস্কার কার্যক্রমসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলো বাজেট বক্তব্যে তুলে ধরতে ১৫ মার্চের মধ্যে অর্থ বিভাগে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্জনগুলোও থাকবে। 

এদিকে নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকবে। এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। টানা ১০ মাস পর মূল্যস্ফীতি গত মাসে ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশের মতো। আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচেই রাখা হবে। আগামী অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানা যায়।

অন্যদিকে আগামী বাজেট বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, নানা কারণে আগামী বাজেট ছোট করতে হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও ছোট হবে। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেয়া হবে না। তবে যেসব বড় প্রকল্প আছে, সেগুলোতে অর্থায়ন চলমান থাকবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW