সাগরে নতুন উদ্বেগ

টেকনাফ উপকূল থেকে ট্রলারসহ ১১ জেলেকে অপহরণ করল আরাকান আর্মি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম
টেকনাফ উপকূল থেকে ট্রলারসহ ১১ জেলেকে অপহরণ করল আরাকান আর্মি

বাংলাদেশ জলসীমায় আবারও ঘটল সশস্ত্র অপহরণের ঘটনা। কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন উপকূলসংলগ্ন সাগর থেকে পাঁচটি মাছ ধরার কাঠের ট্রলারসহ ১১ জন বাংলাদেশি জেলেকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি (এএ)। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরের দিকে নাফ নদীর মোহনা ও সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি সাগর এলাকা থেকে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন। তিনি জানান, “দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে বাংলাদেশের জলসীমার কাছাকাছি থেকে পাঁচটি ট্রলারসহ ১১ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ট্রলারের মালিক মো. কালাম ও মো. শাওনের নাম জানা গেছে।”

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ট্রলার মালিকরা জানিয়েছেন, ওই সময় জেলেরা মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ করেই সশস্ত্র আরাকান আর্মির সদস্যরা ট্রলারগুলো ঘিরে ধরে এবং অস্ত্রের মুখে জেলেদের জিম্মি করে নিয়ে যায়। অপহৃতদের মধ্যে দুটি ট্রলারে ৫ ও ৬ জন করে জেলে ছিলেন। বাকি তিনটি ট্রলারের মালিক ও জেলেদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

টেকনাফ কায়ুকখালী বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, “আমার নিজের একটি ট্রলারও অপহৃতদের মধ্যে রয়েছে। আরও দুটি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে বলে শুনেছি। তবে সেগুলোকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।”

এই অপহরণের ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন অনেক জেলে। এ প্রসঙ্গে মাছ ব্যবসায়ী নুরুল কায়েছ বলেন,

“প্রায়ই আমাদের জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে আমরা চিন্তায় পড়ে গেছি। যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে মাছ শিকার বন্ধ হয়ে যাবে।”

শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান জানান, “আমার এলাকার কয়েকটি মাছ ধরার নৌকাকেও আরাকান আর্মি ধাওয়া করেছে বলে স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।”

ট্রলার ও জেলেদের উদ্ধারে এখন পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, “ঘটনার পরই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছি। নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট একসঙ্গে কাজ করছে। সাগরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”

সরকারি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন।

“জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”

এটাই প্রথম নয়। গত কয়েক বছরে বারবার মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপহৃতদের ফিরে পেতে পরোক্ষভাবে মুক্তিপণের গুঞ্জন উঠেছে।

এই ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের সীমানা এবং সাগরপথে নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকায় টহল জোরদার করা হলেও প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার যথাযথ সমাধান এখনো অধরা।

উপকূলবাসী সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, যেন এসব অপহরণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং সমুদ্রপথে মাছ ধরতে গিয়ে আর কোনো জেলেকে যেন জীবন ঝুঁকিতে পড়তে না হয়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে