ঢাকা শহরের সংগীতপ্রেমীদের প্রতীক্ষিত একটি আয়োজন ছিল ‘মেলোডি আনলিশড’ কনসার্ট, যেখানে প্রথমবারের মতো মঞ্চে উঠার কথা ছিল পাকিস্তানের জনপ্রিয় গায়ক ও রোক্সেন ব্যান্ডের প্রধান ভোকালিস্ট মুস্তফা জাহিদের। কিন্তু কনসার্টের নির্ধারিত সময়ের মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘মেলোডি অ্যান্ড মাইন্ড কমিউনিকেশন’ এক ফেসবুক পোস্টে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করার ঘোষণা দিলে হতাশা ও ক্ষোভে প্রকাশ করেন আগ্রহী দর্শকরা।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে কনসার্ট বাতিলের কারণ হিসেবে ‘নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি’র কথা বলা হলেও পুরো ঘটনার পেছনে রয়েছে গভীর অনিয়ম ও অস্পষ্টতা। শিল্পীদের অভিযোগ, আয়োজকেরা আগেই তাদের সঙ্গে চুক্তির শর্ত মানেননি এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানায়নি।
প্রথমে বলা হয়েছিল কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। পরে আয়োজকদের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, কনসার্ট হবে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আয়োজক প্রতিষ্ঠান কোনো বুকিং সম্পন্ন করেনি এবং কোনও অর্থও পরিশোধ করেনি।
দেশীয় ব্যান্ড ‘লেভেল ফাইভ’ ও ‘এনকোর’সহ গায়ক এ কে রাহুল কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাদের দাবি, আয়োজকেরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেননি এবং শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ কে রাহুল বলেন, “সকাল থেকেই আমরা টের পাচ্ছিলাম কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে। আয়োজকেরা ফোন ধরছিল না, ভেন্যুতে গিয়ে দেখি কোনো প্রস্তুতির চিহ্ন নেই।”
‘লেভেল ফাইভ’ ব্যান্ডের ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস আরও কঠোর ভাষায় বলেন, “তারা আমাদের নাম ব্যবহার করে টিকিট বিক্রি করেছে অথচ পেমেন্টও দেয়নি, ঠিকমতো কোনো তথ্যও দেয়নি। এটা সরাসরি প্রতারণা।”
কনসার্ট বাতিলের ঘটনায় ভক্তদের উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করে মুস্তাফা জাহিদ লেখেন, “আমরা ঢাকায় এসেছিলাম আপনাদের জন্য, গভীর রাত পর্যন্ত রিহার্সাল করেছি। আয়োজকদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পরও আমরা এসেছিলাম আপনাদের মুখে হাসি ফোটাতে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। আমরা হতাশ।”
এটি প্রথম নয়, এর আগেও এই প্রতিষ্ঠান ‘রক দ্য ক্যাপিটাল’ নামের আরেকটি কনসার্ট স্থগিত করেছিল এবং এখন পর্যন্ত সেই কনসার্টের টিকিটের অর্থ ফেরত দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংগীতপ্রেমীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—এই ধরনের অনিয়ম আর প্রতারণার বিরুদ্ধে কি আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে? শিল্পীরা সম্মিলিতভাবে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছেন।