বহুদিন ধরে ঢাকা ওয়াসার পানিতে ময়লা, দুর্গন্ধ ও নানা জীবাণু থাকার বিষয়টি আলোচনায় থাকা সত্ত্বেও এ সমস্যার সমাধান না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। জানা যায়, প্রায় দুই মাস ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ সমস্যা বিরাজ করছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের দাবি, ঢাকা ওয়াসার পানি দূষিত নয়; ময়লা, দুর্গন্ধ বা পোকা নিজ নিজ বাসার রিজার্ভারের কারণে হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অতীতেও এমন দাবি করেছে। অনেক গ্রাহক ওয়াসার কথামতো পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেও কোনো ফল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে ময়লা ও নানা জীবাণুযুক্ত উপাদান পাওয়ার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগের সঞ্চার হবে, এটাই স্বাভাবিক। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে ময়লা পাওয়ায় অধিকাংশ নগরবাসী ওয়াসার পানি পান করা ছেড়ে দিয়েছেন। এ পানি দিয়ে কেবল বাসাবাড়ির ধোয়ামোছা, রান্না ও গোসলের কাজ সারছেন। স্বল্প আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে এ পানিই নানা কাজে ব্যবহার করছেন। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় পানি পাওয়া যায় না। গ্রীষ্মের দুঃসহ গরমে এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না। বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার জন্য সংকটময় এ সময়েও নাগরিকরা নিয়মিত ওয়াসার পানির মূল্য পরিশোধ করছেন। সেই পানিই যদি জীবাণুবাহী হয়, তা মেনে নেওয়া যায় না। এমন মানহীন সেবা প্রদানের দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। এতদিনের পুরোনো এ সংকটের কেন সমাধান হচ্ছে না, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, দূষিত পানি ব্যবহারে নানা রোগব্যাধি হতে পারে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, টঙ্গী ও উত্তরা-এসব এলাকা থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডায়রিয়া রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা থেকেও রাজধানীতে সরবরাহকৃত পানির মানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। রাজধানীর প্রায় শতভাগ মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ওয়াসা। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানিকে কর্তৃপক্ষ ‘নিরাপদ’ বললেও প্রতিদিন নানাভাবে তা দূষণের শিকার হচ্ছে। অনেকে পানি ফুটিয়ে পান করলেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন না হওয়ায় নগরবাসী নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশুদ্ধ পানির সংকট মোকাবিলায় মানুষ যে বিকল্প উৎসের সন্ধান করবে, তারও উপায় নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বোতলজাত ও কনটেইনারে সরবরাহকৃত বিশুদ্ধ পানির নামেও চলে প্রতারণা। যারা বোতলজাত পানি কিনে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়, তাদের কী হবে? বস্তুত রাজধানীতে পানি পরিশোধন যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে এটি এখনো বিলাস পণ্য হিসাবেই বিবেচিত। এ অবস্থায় ঢাকা ওয়াসা রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা। রাজধানীতে অপরিকল্পিত সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির সময় সুয়ারেজ ও পানির লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও পানি দূষিত হয়। কাজেই পানির লাইন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। বস্তুত এ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সেবার মান হতাশাজনক। এ অবস্থার উত্তরণে কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।