নীলফামারীর সৈয়দপুরে ডাঃ স্ত্রীর করা মামলার হাজিরা দিতে এসে ডাঃ স্বামী এ কে এম আরিফুজ্জামানকে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছেন। ২৩ এপ্রিল নীলফামারী আদালতে হাজিরা দিতে আসলে আদালত আসামী ডাঃ আরিফুজ্জামানের জামিন না মন্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
জানা যায়, কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় ডাঃ স্ত্রী উজমা আফরিন এর ওপর নেমে আসে পাষন্ড ডাঃ স্বামী এ কে এম আরিফুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের অমানবিক নির্যাতন। সাথে ওই স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করা হয় ২০ লাখ টাকা। দাবি পুরণ না করলে দেয়া হবে তালাক। এমন অভিযোগ এনে স্ত্রী ডাঃ উজমা আফরিন তার স্বামী ডাঃ মোঃ আরিফুজ্জামান (৩৭) সহ ৪ জনকে আসামি করে নীলফামারী বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা দায়ের করেন। ডাঃ উজমা আফরিন জানান, প্রায় ৬ বছর হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা দেন মোহরে সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাসকান্দর চ্যাংমারী পাড়ার মোঃ মিনহাজ উদ্দিন আহম্মেদ এর ছেলে ডাঃ মোঃ আরিফুজ্জামানের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ে সম্পন্ন হয় পারিবারিক এবং ইসলামি শরীয়া মোতাবেক। বিয়ের পর কিছুদিন সংসার বেশ ভালই চলছিল। এ অবস্থায় হঠাৎ করে আমার স্বামী পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে এবং নেশাগ্রস্ত হয়। প্রায়ই রাতে নেশা সেবন করে বাসায় ফিরতো। তার পরকীয়া এবং নেশা করা দিনের পর দিন বেড়ে যায়। এটি সহ্য করতে না পেরে ,আমি তাকে নিষেধ করলে সে আমাকে বেধড়ক মারপিট করতো। বিভিন্ন সময় আমাকে মারধর করে রক্তাক্ত করতো। এক পর্যায় তার বাবা,মা, বোন সকলে মিলে আমার ওপর নির্যাতন চালায়। এভাবে কাটতে থাকে দিন। এরই মধ্যে আমাদের সংসারে এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তার নাম রাখা হয় ইনায়া। বয়স চলছে ৪ বছর। আমরা ঢাকার উত্তরায় মোঃ রকিবুল ইসলাম নামে একজনের বাসায় ভাড়া থাকতাম। আমার স্বামী ডাঃ আরিফুজ্জামান উত্তরা সেক্টর - ৩ এফএনএফ ডেন্টাল কেয়ার নামক একটি ক্লিনিক পরিচালনা করে। কন্যাসন্তান জন্মের পর থেকে আমার উপর নেমে আসে পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের অমানবিক নির্যাতন। সাথে ২০ লাখ টাকার যৌতুক দাবি। তাদের এ দাবি পুরণে আমি অস্বীকৃতি জানালে স্বামী, শ্বাশুরী,শ্বশুর ও ননদ মিলে প্রায়ই সময় চালাতো নির্যাতন। মারপিটের পাশাপাশি আমার গায়ে গরম চা ঢেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তারা সকলে মিলে নির্যাতনের পর আমাকে এবং আমার মেয়েকে একটি কক্ষে বন্দী করে রাখতো। যেন আমি বাসার বাইরে বের হয়ে কারো কাছে সাহায্য চাইতে না পারি।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তারা আমাকে সকাল থেকে মারধর শুরু করে এবং ১ পাতিল চুলায় বসানো গরম চা আমার শরীরের উপর ঢেলে দেয়। এতে শরীরের বাম দিকের অংশ পুড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়। তখন আমি আর সহ্য করতে না পেরে পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯ নাম্বার এ কল করলে ৩ জন পুলিশ এসে আমাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে ঢাকা থেকে আমাকে সৈয়দপুর বাসায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন আমি সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নেই। হঠাৎ আমার স্বামী গত বছরের ২৫ আগস্ট সৈয়দপুরে আমার বাসার সামনে এসে আমাকে এবং আমার বাবাকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। সে একজন ভয়ংকর প্রকৃতির লোক। তাই ওই বছরের ২৮ আগস্ট সৈয়দপুর থানায় তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী করি,যাহার নম্বর ১৩৪৩।
বর্তমানে পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমি ডাঃ উজমা আফরিন বাদী হয়ে স্বামী ডাঃ আরিফুজ্জামান,শ্বশুর মোঃ মিনহাজ উদ্দিন আহম্মেদ,শ্বাশুরী মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিন ও ননদ মোছা রাফাত সুলতানা রাফিকে আসামি করে নীলফামারীর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- ১ এ মামলা দায়ের করি। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিগণ বিভিন্ন সময়ে আমাকে প্রাননাশের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে।
তাদের এমন হুমকীর কারণে জেলা ম্যাজিস্টেট আদালতে আমি ১০৭ ধারার মামলা দায়ের করি।
আমার গায়ে গরম চা ঢেলে দেয়ায় আমার একটি হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়। যার যন্ত্রণা আমি এখনো ভোগ করছি। গরম চা ঢেলে তারা আমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। আল্লাহ আমাকে এবং আমার মেয়েকে রক্ষা করেছেন।