প্রান্তিকের উন্নয়নেই টেকসই ভবিষ্যৎ: আর্থনা সামিটে ড. ইউনূস

এফএনএস অনলাইন ডেস্ক : | প্রকাশ: ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
প্রান্তিকের উন্নয়নেই টেকসই ভবিষ্যৎ: আর্থনা সামিটে ড. ইউনূস

বিশ্ব একটি জটিল সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা, ভূ-রাজনৈতিক টানাপড়েন, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মানবিক সংকটের ঘূর্ণিপাকে যখন প্রতিটি দেশ নতুন পথ খুঁজছে, তখন কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত 'আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫'-এ এক সাহসী ও প্রজ্ঞাপূর্ণ বার্তা দিয়ে বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার বাস্তব সুযোগ এসেছে। এমন একটি চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ—বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম—ন্যায়বিচার, মর্যাদা, সমতা ও অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিতে একটি টেকসই ও সহনশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণে একত্রিত হবে।”

তিনি বাংলাদেশের জন্য একটি ‘আশার বাতিঘর’ হয়ে ওঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা এমন এক পৃথিবী গড়তে চাই, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র হবে না যে সে স্বপ্ন দেখতে পারবে না, আবার কোনো স্বপ্ন এত বড় হবে না যে তা অর্জন করা যাবে না।”

আর্থনা সামিটে দেওয়া মূল বক্তব্যে ড. ইউনূস পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বকে একটি সমতাভিত্তিক ও টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান:

১. আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিস্তারে জোর:
প্রান্তিক জনগণের জন্য অর্থনৈতিক শক্তি ও জীবিকার সুযোগ তৈরি করতে সবার কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছাতে হবে।

২. সামাজিক ব্যবসার প্রসার:
লাভ নয়, উদ্দেশ্যই হবে প্রাধান্য। পরিবেশ ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই নতুন ধরনের ব্যবসার মডেল হতে পারে কার্যকর হাতিয়ার।

৩. তরুণদের ক্ষমতায়ন:
পরিবর্তনের মূল চালক হিসেবে তরুণদের নেতৃত্বে আনা, তাদের কণ্ঠস্বর শোনা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

৪. শান্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে বিশ্ব গঠন:
টেকসই উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণের জন্য বৈশ্বিক ন্যায়ের ভিত্তিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা জরুরি।

৫. নৈতিক অর্থায়ন ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা:
উন্নত দেশগুলোর উচিত ওডিএ প্রতিশ্রুতি পূরণ করা এবং গ্র্যাজুয়েটেড দেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে রেয়াতি শর্তে অর্থায়ন নিশ্চিত করা।

ড. ইউনূস স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয় যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাই—এটি তৈরি করতে হয়। আমাদের উদ্ভাবন, সহমর্মিতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার শক্তিই পারে একটি নতুন বিশ্ব গড়তে।” তিনি জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য ও কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন থেকে উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে টেকসই সমাধান খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন এবং টেকসই উন্নয়নের পথ খুঁজে বের করার আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য ড. ইউনূস কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের ও ভাইস চেয়ারপারসন ও সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিকে ধন্যবাদ জানান।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW