বান্দরবানের লামা থেকে ৯ জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:২৮ পিএম
বান্দরবানের লামা থেকে ৯ জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম লেমুপালং এলাকায় ফের ঘটেছে চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনা। গত সোমবার (৭ এপ্রিল) গভীর রাতে এবং মঙ্গলবার ভোররাতে দুইজন তামাক চাষি ও সাতজন খামার শ্রমিকসহ মোট ৯ জনকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

অপহরণকৃতদের মধ্যে আল আমিন ও ভুট্টো নামের দুই তামাক চাষির পরিচয় মিলেছে। বাকি সাতজন শ্রমিকের নাম এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মুক্তিপণের দাবি করা হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, লুলাইন এলাকার লেমুপালং পাহাড়ি জনপদে তামাক খামারে দিনভর কাজ শেষে ওই শ্রমিকরা খামার ঘরে রাতযাপন করছিলেন। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে মুখোশধারী সশস্ত্র একদল দুর্বৃত্ত খামারবাড়িতে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে সবাইকে বেঁধে ফেলে এবং গহীন অরণ্যের দিকে নিয়ে যায়।

দুর্গমতার কারণে এলাকাটিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই বললেই চলে। ফলে ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে জানাজানি হয়নি। পরদিন সকালে খামার মালিক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে বিষয়টি জানা গেলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

বান্দরবানের গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উশৈথোয়াই মার্মা বলেন,

“এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও আমাদের এলাকায় একাধিকবার অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। বারবার এমন ঘটনায় পাহাড়ি জনপদে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।”

লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন জানান,

“ঘটনার পরপরই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান শুরু করেছে। অপহৃতদের সন্ধানে পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে।”

পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, লামা উপজেলার কেয়াজুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আতিকুর রহমান অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের খোঁজে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানও চলছে।

উল্লেখ্য, এটি এই অঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তৃতীয় দফার অপহরণ। এর আগে লামার সরই ইউনিয়নে দুটি ঘটনায় মোট ১৪ জন এবং চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন থেকে ২৬ জনকে অপহরণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছাড়া হয় বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

সাম্প্রতিক এই অপহরণগুলো পাহাড়ি নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অব্যবস্থাপনার দিকটিকে আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।

পাহাড়ি জনপদের সাধারণ মানুষ এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি পাহাড়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্ধার ও স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেও, পাহাড়ে বসবাসরত কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পার করছেন।

তাদের প্রত্যাশা—এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও শক্তিশালী ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে