ফরিদপুরে ভয়াবহ এক বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাতজন, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বাবা-ছেলেসহ তিনজন নারী। দুর্ঘটনায় নিহতদের অনেকে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, আর বাকিরা মারা যান হাসপাতালে নেওয়ার পর।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার বাখুন্ডা এলাকার জোয়াইড় সংলগ্ন জোবায়দা করিম জুট মিলের সামনে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি ছিল মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরগামী ফারাবি পরিবহনের একটি লোকাল বাস।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বাসটি উচ্চগতিতে চলছিল এবং একপর্যায়ে আরেকটি যানবাহনকে ওভারটেক করার চেষ্টাকালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। বাসটি সড়কের পাশে থাকা একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে উল্টে যায়। ধাক্কা এতটাই শক্ত ছিল যে বিদ্যুতের খুঁটির একটি বড় অংশ বাসের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা। নিহতরা হলেন:
• নগরকান্দার শেয়ারকান্দি গ্রামের জোয়ার সর্দার (৬৫) ও তাঁর ছেলে ইমান সর্দার (২৮)
• কাঠিয়া বড়গ্রামের দীপা খান (৩৪)
• চরচাঁদপুর গ্রামের মালতী সরকার (৪০)
• মোল্লাবাড়ি এলাকার ফজিরুন নেছা (৬০)
• চরভদ্রাসনের আলম মিয়া (৪০)
• লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার আজিবুর হোসেন (৪০)
দুর্ঘটনার মুহূর্তের বর্ণনায় স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, "একটি বিকট শব্দ হতেই আমরা ছুটে যাই। বাসটি উল্টে আছে, জানালাগুলো ভাঙা, আর আর্তনাদে চারদিক মুখর। বাসের ভেতরে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।"
দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার সাইফুল ইসলাম জানান, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে মৃত এবং ৩১ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করি। আহতদের দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, “গাড়িটি দ্রুতগতিতে চলছিল এবং একটি যানবাহনকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা। হাসপাতালে পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক, যিনি নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।