শিক্ষা হচ্ছে এমন জ্ঞান ও দক্ষতা যার মাধ্যমে মানুষ তার স্রষ্টার প্রতি, জ্ঞাতিজনদের প্রতি এবং চারপাশের মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি নিজ দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে’। কিন্তু এতে সকল মানুষ সফল হয় না। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় অনেকের জীবন। মানুষ অমানুষের মত আচরণ করে, দুঃখকষ্ট নেমে আসে তাদের জীবনে, তার প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পালনে সে ব্যর্থ হয়। নিজের কর্মের সংস্থান করতে পারে না। সমাজে সৃষ্টি হয় কর্মহীন বেকার। বাংলাদেশের মানুষ এর ব্যতিক্রম নয়। উচ্চশিক্ষা যখন চাকরির নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয় তখন সার্বিকভাবে সেই শিক্ষার্থীর ভেতর হতাশা বিরাজ করে। অথচ উচ্চ শিক্ষিত হয়ে তার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কোনো চাকরি পাওয়ার ইচ্ছা থাকাই স্বাভাবিক। বৈশ্বিক পরিস্থিতি এই সংকটকে আরো তীব্র করে তুলেছে। যে হারে বা যে সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতি বছর লেখাপড়া শেষ করে কাজের বাজারে যুক্ত হয় তার অল্পসংখ্যকই চাকরির বাজারে টিকতে পারছে। উচ্চশিক্ষা চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। এক সময় যেমন ভাবা হতো যে, লেখাপড়া শেষ করলেই অন্ততপক্ষে একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবে, আজ আর সেই ধারণা নেই। লেখাপড়া শেষ করাটাই বরং অনেক বেশি সহজ। বিপরীতে চাকরি পাওয়াটা সোনার হরিণের থেকেও বেশি কিছু। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) বিভিন্ন সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষিত তরুণরা বেকার থাকায় রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি সম্পদের অপচয় হচ্ছে। ফলে দক্ষতা বৃদ্ধি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বেকারত্ব বর্তমান সময়ে দেশের একটি বড় ও জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শিল্পায়নের অভাব, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, সমন্বয়হীন শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমাজ ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির উন্নয়নের অভাব, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার অভাবের কারণেই দিনকে দিন বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়া দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের দিক দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম সারির দিকে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটির মতো। এত বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া, শিল্পকারখানা স্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধিত করা। কিন্তু বর্তমানে সেগুলো সংকুচিত হচ্ছে তাই উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কাজের উপযোগী করে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের ওপরও জোর দেয়া যেতে পাড়ে। অদক্ষ জনগণই দেশের বোঝা হয়। দক্ষ জনশক্তি দেশের মঙ্গল বয়ে আনে। তাই জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। প্রতিটি জনগণ দেশের স্বার্থে অবদান রাখতে পারে, সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। চাকরির পাশাপাশি তরুণসমাজকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহ প্রদান করে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।