বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা পণ্যবোঝাই ট্রাকে স্ক্যানিং কার্যক্রম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ছে চোরাচালান। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের সুবিধা হলেও ভোগানি— ও হয়রানি পোহাতে হয় সাধারণ ব্যবসায়ীদের। এতে করে নিরাপদ বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়লেও কোনো মাথাব্যথা নেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি ব্যবসায়ীদের। বাণিজ্য নিরাপত্তায় কাস্টমস, বন্দর, বিজিবি ও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি করে থাকে। পণ্যবোঝাই ট্রাকে যাতে মিথ্যা ঘোষণার কোনো পণ্য বা চোরাচালান পণ্য ঢুকতে না পারে বেনাপোল বন্দরের বাইপাস সড়কে কাস্টমস নিয়ন্ত্রণাধীন একটি মোবাইল স্ক্যানিং মেশিন রয়েছে। যেটি পরিচালনা করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার এসোসিয়েটস।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে স্ক্যানিং মেশিনটি এক বছর ধরে বন্ধ থাকার পর অবশেষে বেনাপোল বন্দর কার্গোভেহিকেল টার্মিনালে নতুন আরেকটি স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে। এটি পরীক্ষামূলক স্ক্যানিং শেষে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের জন্য তিন মাস আগে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হলেও পণ্যবোঝাই কোনো ট্রাক স্ক্যানিং করা হচ্ছে না। যে কারণে অবাধে বৈধপথে চোরাচালান ও অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। ফলে নিরাপদ বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।
ভারতের পেট্রাপোল সীমানে—র তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক থেকে ১৬টি স্বর্ণ চালান আটক করেছে ভারতের সীমান—রক্ষী বিএসএফ। এপারের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কাস্টমস ও বন্দর পেরিয়ে অবাধে স্বর্ণসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য আটক হচ্ছে ওপারের পেট্রাপোল সীমানে—। এছাড়া স্ক্যানিং মেশিন সচল না থাকায় এই সুযোগে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি বাণিজ্যের নামে অযোগ্য ও চোরাচালান পণ্য নিয়ে আসছে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারক বাবলুর রহমান জানান, স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকার সুযোগে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি বাণিজ্যের নামে চোরাচালানে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে আসছে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা। এতে অপরাধ বাড়ছে ও সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। নিরাপদ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্ক্যানিং মেশিনটি সচল রাখা খুব জরুরী।
পণ্য বহনকারী ট্রাকচালক মহসিন খান জানান, বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন সচল থাকলে চোরাচালান সম্ভব হতো না। জরুরিভিত্তিতে স্ক্যানিং মেশিন সচল করা দরকার। মেশিন সচল থাকলে ট্রাকে কেউ অবৈধ পণ্য উঠাবে না।
মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার এসোসিয়েটস বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক বনি আমিন জানান, মোবাইল স্ক্যানিং মেশিনটি সচল না থাকায় প্রায় এক বছর তারা পণ্যবোঝাই ট্রাক স্ক্যানিং করতে পারেননি। নতুন আরেকটি স্ক্যানিং মেশিন কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রাক না পাঠানোর কারণে তাদের বসে থাকতে হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, বাণিজ্য সহজীকরণ এবং চোরাচালান রোধে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে। অথচ স্ক্যানিং মেশিন দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং বাণিজ্য নিরাপদ রাখতে স্ক্যানিং মেশিন চালু করা অতি জরুরী। আশা রাখছি কাস্টমস দ্রুত এর পদক্ষেপ নিবেন।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ডেপুটি ডিরেক্টর মামুন কবীর তরফদার জানান, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্দরে স্ক্যানিং পরিচালনা করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। স্ক্যানিং মেশিন দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় চোরাচালানের ঝুঁকি বাড়ছে। নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে কাস্টমসকে দ্রুত স্ক্যানিং সচল করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি দ্রুতই এটা সমাধান হয়ে যাবে।