ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা লক্ষণীয়: সালাহ উদ্দিন আহমদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা লক্ষণীয়: সালাহ উদ্দিন আহমদ

ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশজুড়ে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যেই দেশের বিভিন্ন শহরে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলের সকল পণ্য বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি, কিন্তু সেটির অর্থ এই নয় যে, আমরা দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা চালাব। গতকাল যেসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন শহরে হামলা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং সরকারের পূর্ব সতর্কতার ঘাটতি সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত ছিল আগেভাগেই পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দেশের অভ্যন্তরে কোনো অরাজকতা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য।”

সোমবার ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রেক্ষিতে অন্তত ছয় জেলায়—কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর, কুমিল্লা ও বগুড়ায়—বাটা, কেএফসি, পিৎজা হাট ও কোকাকোলা বিক্রয়কেন্দ্রসহ মোট ১৬টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। যদিও এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে ব্যবসায়ী মহলে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এমন একটি দিনে এসব ঘটনা ঘটে, যেদিন দেশে চলছিল বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আয়োজিত ‘ইনভেস্টমেন্ট সামিট’। ফলে এসব হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

বক্তৃতায় সালাহ উদ্দিন আহমদ দাবি করেন, “আওয়ামী লীগ সরকার পরোক্ষভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পাসপোর্টে আগে উল্লেখ থাকত “ইসরায়েল ব্যতীত সকল দেশে গমনযোগ্য”। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ওই ‘ইসরায়েল’ শব্দটিই সরিয়ে দিয়েছিল।’”

তিনি আরও বলেন, “এই সরকার ইসরায়েলের তৈরি ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে দেশের গণতান্ত্রিক নেতাকর্মীদের ওপর নজরদারি চালিয়েছে, যা স্পষ্টভাবে ফ্যাসিবাদী আচরণ।”

গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার নিন্দা জানিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, “যে ভয়াবহ নৃশংসতা ফিলিস্তিনে ঘটছে, তাতে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা দেখেছি, জাতিসংঘে যখন ফিলিস্তিনের পক্ষে কোনো প্রস্তাব আসে, তখনই কোনো না কোনো পরাশক্তি তাতে ভেটো প্রয়োগ করে। এর মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে।”

সমাবেশে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে আন্দোলন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে। সহিংসতার মাধ্যমে প্রতিবাদ নয়, বরং ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করতে হবে।”

তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের কারণে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ভারতের পার্লামেন্টে সম্প্রতি পাস হওয়া ওয়াক্‌ফ আইন সংশোধনীরও সমালোচনা করেন।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেন। তারা ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান এবং অচিরেই সারাদেশে বড় পরিসরের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দেন।

সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে