রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ভীম রাজার স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন নিদর্শন ধ্বসে যাওয়া প্রাসাদ এলাকার মাটি লুটপাট শুরু হয়েছে। উচু টীলা নিশ্চিহ্ন হলে ওই স্থানসহ আশপাশের জমিগুলো ভোগদখরের উদ্দেশ্যে একটি চক্র এ লুটপাট শুরু করেছে মর্মে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। বিষযটি নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রাপ্ত তথ্য ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের ভীমশহর গ্রামে শত বছর আগের এ রাজ প্রাসাদটির অবস্থান। কথিত আছে এক সময়ের প্রভাবশালী রাজা ছিলেন ভীম চন্দ্র। তিনি উক্ত স্থানে বসবাসের মাধ্যমে বিশাল এলাকা শাসন করতেন। তিনি এখানে প্রায় ৮ একর জমির উপর নির্মাণ করেন সুউচ্চ রাজ প্রাসাদ। চতুপার্শে বিশাল উচুঁ প্রাচীর বেষ্টিত নিরাপদ প্রাসাদে অবস্থান করতেন রাজা ভীম চন্দ্র ও তার ছোট ভাই ভূবন চন্দ্রসহ পরিবারের সদস্যরা। যেখানে প্রতিপক্ষের আক্রমনের কোন সুযোগই ছিল না। প্রাসাদ সংলগ্ন পুর্ব পার্শে সুরক্ষিত ও উঁচু স্থানে ছিল তাদের হাওয়া খানা। যেখানে তারা উপভোগ করতেন নির্মল বায়ু। এ প্রাসাদটি এলাকাবাসীর কাছে এখন বুরুজ নামে পরিচিত। রাজ প্রাসাদ থেকে পুর্বে প্রায় ৫’শ মিটার দুরে ছিল উচুঁ পাড় বেষ্টিত এক বিশাল আয়তনের পুকুর। প্রায় ১৬ একর আয়তনের এ পুকুরে রাজা ভীম চন্দ্র ও তার পরিবারের সদস্যরা হাতির পিঠে চড়ে এসে গোসল করতেন। যেটি এখন ভুয়ার পুকুর নামে পরিচিত। পুকুর ও পাড়ের অস্তিত্ব আজও বিদ্যমান থাকলেও পুকুরটি অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। রাজা ভীম চন্দ্রের অপর ভাই ভূবন চন্দ্রের গোসলের জন্যও ভুয়ার পুকুর থেকে অনতিদুরে ছিল পৃথক একটি পুকুর। যেটি এখন ছোট পকড়া নামে পরিচিত। কথিত আছে প্রায় ৬ একর আয়তনের এ পুকুরটিতে ভূবন চন্দ্র ও তার পরিবারের সদস্যরাও পৃথক হাতির পিঠে চড়ে পুকুরটিতে গোসল করতেন। সেটির প্রায় ভরাট হয়ে গেলেও নাম মাত্র পুকুরটির অস্তিত্ব আজও বিদ্যমান রয়েছে। এ প্রাসাদের পরিস্থিতি সমপর্কে বলতে গিয়ে ভীম শহরের রমজান আলী, শাহাব উদ্দিনসহ অনেকে জানান, রাজা ভীম চন্দ্র ও ভুবন চন্দ্রের রাজপ্রাসাদটি মুল সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার লোকজন প্রাসাদের ইট ও সুড়কী নিয়ে যাবার কারনে এর উচ্চতা পুর্বের তুলনায় ১০ ফুট কমে গেছে। অপর দিকে রাজাদের জন্য ভুয়ার পুকুর ও ছোট পকড়া নামে যে দুটি বিশাল আয়তনের পুকুর ছিল সেগুলোও অনেকটাই ভরাট হওয়ার কারনে শুধু মাত্র পুকুর গুলির অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন এ প্রতিবেকের কাছে অভিযোগ করেন, রাজা ভীম চন্দ্র ও ভুবন চন্দ্রের রাজ প্রাসাদসহ তাদের গোসলের পুকুর গুলোসহ ৩০ একরের মত জমি রয়েছে। কিন্তু সে জমিগুলো এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যাক্তি তাদের দখলে নিয়ে চাষাবাদ ও মাছ চাষ করছেন। তারা কি ভাবে জমিগুলো ভোগ দখলের সুযোগ পেল ? তা এলাকার সর্ব সাধারনের বোধগম্য নয়। স্থানীয় মৃত মোস্তাফিজার রহমানের ছেলে জনৈক রেজাউল ইসলাম লেবুসহ অনেকের পুর্ব পুরুষরা ভুমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজোসে ১৯৬২ সালে তাদের নামে রেকর্ড করে নেন। পরে গত ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে একই গ্রামের মৃত মেহেদি হাসানের ৩ ছেলে আবুল কালাম আজাদ মাসুম,শাহিনুর রহমান ও আবু সায়েম ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করে নেন। বর্তমানে ওই এলাকার আরও ১২ ব্যক্তি ওই জমির মালিকানা দাবি করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ উঁচু স্থানের মাটি কেটে বিক্রির প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। ফলে অস্বিত্ব সংকটে পড়েছে রাজা ভীমের বাড়ির শেষ চিহ্নটুকুও। এর আগে বিশাল বিশাল গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছে স্থানীয় মাসুম নামের এক যুবক। রংপুর প্রত্নতত্ব্ বিভাগে সেই সময়ে কর্মরত কর্মকর্তারা বর্তমানে এখানে না থাকায় বিশাল শুন্যতার সৃস্টি হয়েছে। সেই সুযোগটাই গ্রহন করেছে স্থানীয় কতিপয় ধুরন্ধর ব্যাক্তি।
জরুরী ভিত্তিতে রাজা ভীম চন্দ্র ও ভূবন চন্দ্রের রাজপ্রাসাদ ও তাদের জমি গুলোর ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের খতিয়ে দেখে বেদখলকৃত জমিগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি রাজপ্রাসাদ ও পুকুর ২টি সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয়ার দাবি এলাকাবাসীর । এতে একদিকে যেমন সরকারের বেদখল হয়ে যাওয়া জমিগুলো উদ্ধার হবে,পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে এলাকাটিও ব্যাপক পরিচিতি পাবে গোটা দেশে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন-আজ আমার ওয়ার্কিং ডে নয়, এরপর গতানুগতিকভাবে বলেন-অভিযোগ পেয়েছি,ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে !