দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও মাদক সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমছে না, বরং তারা কৌশল বদলে আরো ছায়ার ভেতর কাজ করছে। অভিযানে ধরা পড়া অনেক মুখই চেনা। কেউ স্থানীয় প্রভাবশালী, কেউ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য। সমাজের নানা স্তরে, নানা পেশার আড়ালে গড়ে উঠছে মাদকের সাম্রাজ্য। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ নৌপথে ইয়াবা পাচারে জড়িত, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল হয়ে উঠছে নতুন ট্রানজিট রুট। ছোট ছোট চালান এখন লাখ ছাড়িয়ে কোটি টাকার মুনাফায় পরিণত হচ্ছে। আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, এই চক্রে যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য পর্যন্ত। বিষয়টি আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতার দলিল। মাদক এখন আর শুধুই সীমান্তের সমস্যা নয়, এটি সমাজের শিরায় শিরায় ঢুকে পড়েছে। গৃহস্থ বাড়ির ভেতর, নামি স্কুল-কলেজের করিডরে, শহরের অ্যাপার্টমেন্টে, মফস্বলের মেঠোপথে সবখানেই মাদকের অস্তিত্ব বিরাজমান। যাদের ধরা হচ্ছে তারা বেশির ভাগই ‘চুনোপুঁটি’। রাঘব বোয়ালরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রসঙ্গত, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে উপকূলীয় এলাকার এক সংসদ সদস্য ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। শঙ্কা হয়, পরিবর্তিত বাস্তবতায় তারা নতুন কোনো ‘বন্দোবস্তের’ ভেতর জায়গা করে নিয়েছে কি না! মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানে সিন্ডিকেটের মূল শিকড়ে আঘাত হানা, অর্থনৈতিক জালের সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ করা, সবাইকে আইনের আওতায় আনা। যতক্ষণ না ‘অপরাধ’ আর ‘ক্ষমতা’ এই দুটি শব্দের মাঝখানে দূরত্ব তৈরি করা যাবে, ততক্ষণ মাদকবিরোধী যেকোনো অভিযান হবে শুধু খবরে জায়গা পাওয়ার কৌশল। আমরা কিভাবে একটি প্রজন্মকে রক্ষা করব, তাদের মেধা ও মননকে বিকশিত হতে দেব- এই প্রশ্নে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। অভিযান চলুক, তবে এবার যেন সেই অভিযান সমাজের মূলে, প্রশাসনের বিবেকের গভীরে আর নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তে গিয়ে আঘাত করে। আমরা আশা করি, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে মাদকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।