দেশের বিচার ব্যবস্থায় মামলাজট এক দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ২০০৭ সালে ১৫ লাখ ৭০ হাজার মামলা নিয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হওয়া বিচার বিভাগে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪৫ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতি বছর নতুন মামলা যুক্ত হওয়ার হার এতটাই বেশি যে বিচারক, অবকাঠামো এবং প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়াই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মামলাজট নিয়ন্ত্রণ করতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। মামলার সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে তুলনায় নিষ্পত্তির হার অনেক কম। এর প্রধান কারণ বিচারকের স্বল্পতা, অবকাঠামোর অভাব এবং প্রশাসনিক জটিলতা। বর্তমানে আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগে যথাক্রমে ৫ ও ৯৪ জন বিচারপতি রয়েছেন, যা বিদ্যমান মামলার তুলনায় অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। অধস্তন আদালতে ২,১৪৯ জন বিচারক থাকলেও মামলার তুলনায় এ সংখ্যা নিতান্তই কম। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি মামলাজট নিরসনে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। এছাড়া, বিচারক নিয়োগ, বিচারিক কাঠামো উন্নয়ন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশমালা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং অধস্তন আদালতে বিচারকের সংখ্যা ৬ হাজারে উন্নীত করার সুপারিশ এসেছে। অতীতে কিছু উদ্যোগ মামলাজট নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছিল, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আনতে পারেনি। ২০২২ সালে মামলার নিষ্পত্তি হার কিছুটা বাড়লেও, ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে পরিস্থিতি আবারও অবনতির দিকে গেছে। এর পেছনে বিচারক স্বল্পতা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার আধিক্য দায়ী। এই সংকট নিরসনে বিচারক নিয়োগের হার দ্রুত বাড়ানো, আদালতের অবকাঠামো উন্নত করা এবং মামলার বিকল্প নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া আরও কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার প্রবণতা কমানোর জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা দরকার। বিচার ব্যবস্থা জনগণের ন্যায়বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল। যদি এই ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়, তবে তা রাষ্ট্রের সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই মামলাজট নিরসনে পরিকল্পনা নয়, বরং কার্যকর উদ্যোগই এখন সময়ের দাবি।