এক মাসের স্বস্তির পর আবারও কিছুটা বেড়েছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির এই সামান্য বৃদ্ধি মূলত ঘটেছে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে। যদিও খাদ্যদ্রব্যের দামে কিছুটা স্বস্তি এসেছে, কিন্তু অন্যান্য পণ্য ও সেবার খরচ বাড়ায় ভোক্তাদের সামগ্রিক ব্যয় বাড়তেই থাকছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যেখানে ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এর মানে, পণ্য ও সেবা মিলিয়ে যদি গত বছর মার্চে ১০০ টাকায় সংসার চালানো যেত, তবে এ বছরের একই সময়ে সেটির জন্য খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৩৫ পয়সা—প্রতিটি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৩৫ পয়সা।
গ্রামাঞ্চলে:
মার্চ মাসে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ।
গ্রামীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ হয়েছে, যেখানে খাদ্যবহির্ভূত খাতে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ-এ দাঁড়িয়েছে।
শহরাঞ্চলে:
শহরাঞ্চলে মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
শহরের খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে তা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ—যা যথাক্রমে ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯.৪৭ ও ৯.২৭ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য বলছে, মার্চে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, অর্থাৎ মজুরি যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়।
দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ কর্মজীবী মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, যাদের সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি। এদের বেশিরভাগই নিম্নদক্ষ পেশায় নিয়োজিত, যারা মূল্যস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি টের পান।
এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন মানুষের আয় কমছে প্রকৃত অর্থে, অন্যদিকে পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনমান আরও চাপে পড়ছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে, যার প্রভাব অর্থনৈতিক খাতে কিছুটা পড়ছে। তবে এখনও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে তার ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালা ও উদ্যোগ গ্রহণের পরও বাজারে স্থিতিশীলতা পুরোপুরি ফিরে আসেনি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজন শুধু আর্থিক নীতিমালা নয়, পাশাপাশি বাজার তদারকি, আমদানি-রপ্তানি সমন্বয় এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা না গেলে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও নিচে নেমে যেতে পারে।