রাজধানীসহ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। অনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি। দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও তাই প্রতিদিন বিষয়বস্তু হিসেবে রূপ নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। বর্তমান বাংলাদেশে দৈনিক মৃত্যুর হার গণনা করলে যা দাঁড়ায়, তার একটি বড় অংশজুড়ে আছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। এর প্রধান কারণ অনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাসহ সড়কপথে ট্র্যাফিক আইন তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়াভাবে দূরপাল্লার যান চালানো হয়। ট্র্যাফিক আইন না মানলে চালকদের জন্য কঠিন রকম বিচারব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ব্যাপকহারে ঘটছে। বর্তমানে উদ্বেগজনক হারে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার বেড়ে চলছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন তরুণেরা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে। স্বভাবতই তরুণরা কৌতূহলবশত হয়। আবেগে বশবর্তী হয়ে তরুণেরা নিজেদের বীরত্ব প্রদর্শন করতে গিয়ে অকালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটার পিছনে কতগুলো কারণ রয়েছে। তা হলো- অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং চেষ্টা, বারবার লেন পরিবর্তন করা, ট্র্যাফিক আইন না মানা, চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলা, হেমলেট ব্যবহার না করা কিংবা নিম্নমানের হেমলেট ব্যবহার করা প্রভৃতি। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে ব্যক্তি সচেতনতাই মুখ্য। মনে রাখতে হবে, মোটরসাইকেল বেপরোয়া গতিতে চালানোর ফলে চালক নিজেকেই ঝুঁকিতে ফেলছেন তা নয়, বরং পথযাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। লোকাল বাস, সিএনজি অটোরিকশা, টেক্সিক্যাবসহ গণপরিবহনের প্রতিটি সেক্টরেই বল্গাহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা ধরনের ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে নগরবাসী। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের হাত ধরে সারা বিশ্বেই যোগাযোগব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটে চলেছে। অ্যাপভিত্তিক ব্যবসায় বাণিজ্য এবং রাইড শেয়ারিং তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তৃতির সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি বিভাগীয় শহরে ইতোমধ্যে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও এবং উবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু গণপরিবহনের বেপরোয়া চালকদের মতো এসব অ্যাপভিত্তিক নেটওয়ার্কেও কিছু বেপরোয়া, অদক্ষ ও অপরাধপ্রবণ বাইকার ও গাড়িচালক ঢ়ুকে পড়েছে। এদের কারণে পাঠাও এবং উবারের মতো গণপরিবহন নেটওয়ার্কিং এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বেপরোয়া ও অদক্ষ বাইক চালনার শিকার হয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাঠাও চালক ও আরোহীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ও দুর্ঘটনা ঘটে। চালকদের অনেকের প্রশিক্ষণ নেই। তা ছাড়া অনেকে আবার রাজধানীর সড়ক সম্পর্কে যথেষ্ট পরিচিতও নয়। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। জীবনের নিরাপত্তা সবার আগে। জীবন থাকলে মোটরসাইকেল ছাড়াও অনেক জায়গায় নিজের বীরত্ব প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। তাই মোটরসাইকেল চালানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনকেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ট্র্যাফিক আইন যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। একই সাথে প্রতিটি মোটরসাইকেল যেন নিবন্ধিত হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। লাইসেন্সবিহীন চালকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ১৮ বছরের নিচে কেউ যাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স না পায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি, পারিবারিক সচেতনতা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার মাধ্যমে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধ করা যেতে পারে।