দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার মহেশ বাবু এবার আলোচনার কেন্দ্রে, তবে অভিনয়ের জন্য নয়—বিতর্কের জালে জড়িয়ে পড়ার কারণে। হায়দরাবাদের দুটি রিয়েল এস্টেট সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ ও প্রতারণার অভিযোগে শুরু হওয়া তদন্তে নাম জড়িয়েছে এই তারকার। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে তলব করেছে ২৭ এপ্রিল, হায়দরাবাদের দপ্তরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাঁকে।
মূল অভিযোগ হায়দরাবাদভিত্তিক সাই সূর্য ডেভেলপারস এবং সুরানা গ্রুপ নামে দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সম্পত্তি বিক্রির নামে তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেনি। একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। এমনকি, অগ্রিম টাকা নেওয়ার পরেও সঠিক চুক্তিপত্র না দিয়ে প্রতারণা করেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
ইডি জানিয়েছে, এই সংস্থাগুলির হয়ে বিজ্ঞাপন করেছিলেন মহেশ বাবু। 'গ্রিন মিডোজ' নামে একটি প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন তিনি। এই কারণেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, সাই সূর্য ডেভেলপারস মহেশ বাবুকে বিজ্ঞাপনের জন্য মোট ৫.৯ কোটি টাকা প্রদান করেছিল। এর মধ্যে ৩.৪ কোটি টাকা দেওয়া হয় ব্যাংকের মাধ্যমে, আর বাকি ২.৫ কোটি নগদে। এই নগদ অর্থ নিয়েই তৈরি হয়েছে সন্দেহ। ইডির মতে, নগদ লেনদেনটি ওই সংস্থার কালো টাকার অংশ হতে পারে।
তবে এখনই মহেশ বাবুকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে না। তদন্তকারী অফিসারদের মতে, তিনি হয়তো জানতেন না এই আর্থিক কেলেঙ্কারির গভীরতা, শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনী চুক্তির অংশ হিসেবেই জড়িয়েছিলেন। তবুও, তাঁর পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা অনেক মানুষকে ওই প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছিল—এই দাবিও তুলেছেন তদন্তকারীরা।
গত ১৬ এপ্রিল ইডি হায়দরাবাদ ও সেকেন্দ্রাবাদে চারটি জায়গায় অভিযান চালায়। সেই অভিযানে ১০০ কোটি টাকারও বেশি নগদ অর্থ, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও লেনদেনের তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু সুরানা গ্রুপের কাছ থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৭৪.৫ লক্ষ টাকা।
এই মামলার তদন্ত চলছে ২০০২ সালের প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (PMLA) অনুযায়ী। যদিও এখনও পর্যন্ত মহেশ বাবু নিজে কোনো প্রতারণায় জড়িত ছিলেন এমন প্রমাণ মেলেনি, তবে নগদ লেনদেন ও বিজ্ঞাপন চুক্তি নিয়ে ইডির কাছে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এই কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে তদন্ত সংস্থা।
এদিকে, এখনো পর্যন্ত মহেশ বাবু নিজে এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি বা ইডির ডাকে তিনি হাজির হবেন কি না, তাও স্পষ্ট নয়।