তদন্তে তিন প্রতিষ্ঠান

র‌্যাবের গুলিতে কলেজ ছাত্র নিহত, স্কুল ছাত্র গুলিবিদ্ধ

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : : | প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
র‌্যাবের গুলিতে কলেজ ছাত্র নিহত, স্কুল ছাত্র গুলিবিদ্ধ

জেলার আগৈলঝাড়ায় র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে হামলায় দুইজন র‌্যাব সদস্য আহত এবং গুলিতে কলেজ ছাত্র নিহত ও এসএসসি পরীক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার তিনদিন পরেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দেয়নি র‌্যাব-৮ এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

ঘটনার একদিন পর (২২ এপ্রিল) বিকেলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় নিহত সিয়াম মোল্লাকে মাদক কারবারি বলা হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মাদক কারবারিতো দূরের কথা। সিয়াম কখনো মাদক সেবনও করেননি। এছাড়া হাসপাতালের রেকর্ড বইয়ে নিহত সিয়ামের বয়স ২২ বছর উল্লেখ করা হলেও জন্মসনদ অনুযায়ী তার (সিয়াম) বসয় ১৭ বছর।

গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলিতে সিয়াম মোল্লা নিহত হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন রাকিব মোল্লা। র‌্যাবের ভাষ্যমতে রাকিব একজন কুখ্যাত মাদক কারবারি। তবে সিয়াম বা রাকিবের বিরুদ্ধে আগৈলঝাড়া, গৌরনদী ও উজিরপুর থানায় মাদক সংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। গুলিবিদ্ধ রাকিব সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বারপাইকা কেন্দ্রে চলতি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আর নিহত সিয়াম কারফা আইডিয়াল কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিহত সিয়াম উজিরপুর উপজেলার বাহেরঘাট এলাকার রিপন মোল্লার ছেলে এবং গুলিবিদ্ধ রাকিব একই এলাকার খালেক মোল্লার ছেলে। সর্ম্পকে তারা মামাতো-ফুফাতো ভাই।

ঘটনার পর থেকে বরিশাল র‌্যাব-৮ এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অদ্যবর্ধি (বুধবার পর্যন্ত) আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া না গেলেও র‌্যাবের সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আসল ঘটনা বোঝা যাবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ কার্যালয় থেকেও পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা যতোদূর জেনেছি সেটা হচ্ছে র‌্যাব মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়। একজন র‌্যাব সদস্যকে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। সে পুকুর থেকে গুলি চালায়। পাশাপাশি হামলায় র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

বুধবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল আগৈলঝাড়ার মোল্লাপাড়া ও হতাহতদের উজিরপুরের বাহেরঘাট গ্রাম ঘুরে নারী এবং শিশু ব্যতিত কোনো পুরুষ সদস্যদের দেখা মেলেনি। ঘটনার পর থেকেই পুরুষ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেদিনের পুরো ঘটনার বর্ণনা করে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মোল্লাপাড়া গ্রামের জোরা ব্রিজ নামক এলাকার মানিক মোল্লার চায়ের দোকানে টিশার্ট পরিহিত দুইজন ব্যক্তি এসে এলাকার এক যুবককে টানা হেঁচড়া শুরু করেন। এসময় টানা হেঁচড়া করা যুবক ছিনতাইকারী বলে চিৎকার দিলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ওই দুইজনের পরিচয় জানতে চান। কথা কাটাকাটির মধ্যে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ওই দুইজনের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন পিস্তল বের করে গুলি চালায়। এ সময় ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা কলেজ ছাত্র সিয়াম মোল্লা ও স্কুল ছাত্র রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকেরা সিয়ামকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপর গুলিবিদ্ধ রাকিবকে তাৎক্ষনিক বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার অনেক পরে পোশাকধারী র‌্যাব সদস্যরা সেখানে আসেন বলেও তারা উল্লেখ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা হেঁচড়া করা ওই যুবক হলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সিয়ামের প্রতিবেশী রুবেল মোল্লা। যিনি ঢাকায় থাকেন। রুবেলদের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ঘরে ছিলেন তার মা আনোয়ারা বেগম ও দুই বোন আসমা আর সালমা। আসমা বেগম বলেন, রুবেলের সাথে কারও ঝামেলা হয়েছে শুনে তারা দুইবোন শশুড় বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছেন। এসে শোনেন রুবেল ঢাকায় চলে গেছেন।

নিহত সিয়ামের চাচাতো বোন উজিরপুরের ধামুরা ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মীম আক্তার বলেন, কারফা আইডিয়াল কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন সিয়াম। সে কোনদিন মাদকের সাথে জড়িত ছিলোনা। এমন কোন খবর তারা কখনও শোনেননি।

আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. অলিউল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকারি কাজে বাঁধা দানের পাশাপাশি ৩৯৩ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে ২২ এপ্রিল বিকেলে থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। র‌্যাবের ডিএডি সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার শেখ রিয়াজুল ইসলাম বাদি হয়ে দুইজনের নামোল্লেকসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দুটি দায়ের করেছেন। সেখানে মাদক কারবারীদের হামলায় র‌্যাবের সদস্য অপেল মাহমুদ রাজীব ও আরিফুল ইসলাম শাকিব আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আহতরা বরিশালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার পর থেকে অদ্যবর্ধি (বুধবার বিকেল) পর্যন্ত আনুষ্ঠানকিভাবে র‌্যাব-৮ এর কর্মকর্তারা কোন বক্তব্য প্রদান করেননি। তথ্য চেয়ে সাংবাদিকরা র‌্যাব-৮ পরিচালিত মিডিয়া সেলে বার্তা দিলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনারদিন র‌্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে সেখানে গিয়েছিল মাদক কারবারি আটক করতে। একজনকে আটকও করা হয়েছিল। তখন তার সহযোগিরা র‌্যাবের কাছ থেকে আটককৃতকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আভিযানিক টিমের ওপর হামলা চালায়। এসময় র‌্যাব আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, আমাদের অভিযান ও তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। অভিযান শেষ হলে প্রকৃত ঘটনা গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে