লবণের দরপতনে দিশেহারা ১২ হাজার চাষী

এফএনএস (বলরাম দাশ অনুপম; কক্সবাজার) : : | প্রকাশ: ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
লবণের দরপতনে দিশেহারা ১২ হাজার চাষী

পেকুয়া উপজেলার লবণ চাষীরা লবণের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে দিশেহারা হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। চৈত্রে প্রখর রৌদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ১২ হাজার কৃষক। 

পেকুয়া উপজেলার ৭ইউনিয়নের পেকুয়া সদরের আংশিকসহ ৫ ইউনিয়নে লবণ চাষ হয়ে থাকে। রাজাখালী ইউনিয়ন উজানটিয়া মগনামা ও পেকুয়ার একাংশে ১০হাজার ২৩৫ একর মাঠে লবণ চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমের শুরুতে ২৫০টাকা মণ দাম পেলেও এসময়ে গেল মৌসুমে লবণ মণ প্রতি মূল্য ছিল ৫শ থেকে ৫শ ৫০টাকা। লবণের দাম ১৭০ থেকে ১৮০টাকায় নেমে গেলে চাষীরা লবণও বিক্রি করতে পারেনি। পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের বাজার পর্যন্ত করতে পারেনি বলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। লবণের উৎপাদন খরচ কানি প্রতি ১লাখ ২০হাজার টাকা ছড়িয়ে গেলেও উৎপাদন খরচও তুলতে পারেনি কৃষকরা। 

মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে অবশিষ্ট সময়ের উৎপাদন হওয়া লবণ ও বিক্রিত লবণের দাম নিয়ে কৃষকরা অর্ধেক খরচও তুলতে পারবেনা বলে হতাশ হয়ে গেছে। কৃষকরা জানিয়েছে, এক সময় জমিদার থেকে ২৫/৩০হাজার টাকা নিয়ে জমি লাগিয়ত নিতে পারতো অন্যান্য খরচও ছিল এখনের চেয়ে প্রায় ৪০শতাংশ কম। বর্তমানে পলিথিন শ্রমিকের যে মূল্য তা দিয়ে কেউ উৎপাদন খরচ তুলতে সক্ষম হবেনা। কৃষকরা জানিয়েছে এক শ্রেণীর দালাল জমি গুলো নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে কানি প্রতি ৫০হাজার টাকা দামে কৃষকদের হস্তান্তর করে। পূর্বে মন প্রতি ৪৫/৪৬ কেজি ওজন পরিমাপে লবণ নিলেও দালাল চক্র এখন ৫৫ থেকে ৬০ কেজির ওপরে পরিমাপ নিয়ে কৃষকদেও জিম্মি করে রেখেছে। জমির লাগিয়ত ও দালাল প্রথা প্রতিরোধ করলে কোন ভাবে কৃষকরা বাঁচতে পারতো বলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা জানিয়েছে।

 রাজাখালীর কৃষক হামিদ জানিয়েছে প্রায় কৃষক ধার কর্জে জর্জরিত। সাধারণ ভাবে পরিবারের ভরণ পোষণ কেউ চালাতে পারছেনা। এমন পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে কৃষকরা মাঠে মারা যাবে ভবিষ্যতে লবণ চাষী পাওয়া যাবেনা। উজানটিয়ার কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, অন্যন্য এলাকার থেকে উজানটিয়ার কৃষকদের পরিবহন খরচ একটু বেশী। এর উপরতো দালাল প্রক্রিয়ায় গলাচিপা প্রান্তিক চাষীরা কি করবে ভেবেও পাচ্ছেনা। দালাল চক্রের হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে না পারলে লবণ চাষীরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। মগনামার কৃষক গোলাম রব্বান বলেন, ক্রমাগত লোকসান গুনতে গিয়ে বেশির সংখ্যক কৃষক দালাল চক্রের হাতে বন্ধি হয়ে পড়েছে। নিশ্চিত লোকসান মেনে নিয়ে দালালদের ধার্য্য লাগিয়ত ও চাপিয়ে দেয়া পরিমাপ মেনে নিয়ে চাষাবাদে বাধ্য প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক শফিউল কাদের বলেন, ১মন লবণ বিক্রি করে একটি তরমুজ পাওয়া যাচ্ছেনা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির বাজারে সংসারের সওদাও ক্রয় করা যাচ্ছেনা। 

লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক  মো: জাফর ইকবাল ভূইয়া বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত বছরে উৎপাদিত লবণ এখনো অবিক্রিত অবস্থায় গর্তে রয়েছে। লবণ উৎপাদন বেশী কিন্তু চাহিদা কম। তিনি আরো বলেন, মূলত বিসিক লবণের দাম নির্ধারণ করেনা। লবণের মূল্য লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের উপর নির্ভর করে থাকে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে