সিভিল এ্যাভিয়েশন কতৃপক্ষ সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে চলছে কর্মযজ্ঞ। বিমানবন্দর রানওয়ে স্মুথ (ওভারলে) করণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। দুর্ঘটনা শূন্যে আনতেই রানওয়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ছয়টি যাত্রীবাহী বিমান রানওয়েতে অবস্থান করতে পারে সেজন্য ছয়টি এ্যাপ্রোন নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। বিমান ওঠানামায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সে লক্ষ্যকে ঘিরেই আধুনিক মানের বিমানবন্দর হিসাবে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে গড়ে তোলা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন ১৭টি যাত্রীবাহী বিমান ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা,সৈয়দপুর-কক্সবাজার এবং কক্সবাজার-সৈয়দপুর যাতায়াত করছে।
আগামীতে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রীবাহী বিমান যাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে তেমন প্রস্তুতি নিয়েই উন্নয়ন কাজ করছেন কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দর রানওয়ের নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে প্রায় ১০ কিলোমিটার পেট্রোল রোড নির্মাণের কাজ শেষ হতে চলেছে। কতৃপক্ষের গৃহিত এসব কাজ শেষ হলে সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে বলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ জানিয়েছে। এজন্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৮৪ কোটি টাকা।
বর্তমানে সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে কমপক্ষে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার যাত্রী ঢাকা-সৈয়দপুর ও সৈয়দপুর-কক্সবাজার-সৈয়দপুর যাতায়াত করছে। প্রতিদিন বাড়ছে যাত্রীসংখ্যা। এজন্য বিমানের সংখ্যাও আগামী দিনে বৃদ্ধি করা হবে বলে একই সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বিএনপি সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সভাপতি প্রবীন রাজনীতিবিদ আলহাজ্ব অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকি সেনারা সমরাস্ত্র আনা নেয়ার জন্য সৈয়দপুর সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু দ্রুত দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় পাকি সেনারা
আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানে চলে যায়। ফলে অসমাপ্ত থাকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ। এদিকে বিগত ১৯৭৫ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে ক্ষমতায় আসীন হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি দেশের পিছিয়ে পড়া উত্তরাঞ্চলকে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করাও ছিলো তার লক্ষ্য। এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ১৯৭৭ সালে তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দর উদ্বোধন করেন।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম জানান, দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মনে করতেন সৈয়দপুর বিমানবন্দর চালু হলে দেশ বিদেশের মর্যাদা সম্পন্ন মানুষরা আকাশপথে দ্রুত উত্তরাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ছোট,মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে। আর দেশে শিল্পায়ন হলে ধীরে ধীরে বেকারত্ব কমবে। আর্থিকভাবে লাভবান হবে এই জনপদের মানুষ। বিশেষ করে সার্কভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশ সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের সমৃদ্ধি ঘটাতে পারবে। এর ফলে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উত্তরাঞ্চলে তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করে শিল্প গড়ে তুললে অবহেলিত উত্তরাঞ্চলে অর্থনীতির চাকা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। পাল্টে যাবে আর্থিক চিত্র। মানুষ হবে কর্মে আত্মনির্ভরশীল। বেকারত্ব থাকবে না। কৃষিরও প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে। কিন্তু নির্মম পরিহাস, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উদ্বোধনের অল্প কয়েক বছরের মাথায় ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মারা যান।
এরপর সরকারের পালাবদল হতে থাকে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থবিরতা দেখা যায়। বিগত সরকারের আমলে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হলেও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুখ্য উদ্দেশ্যে আলোর মুখ দেখেনি। গত বছর ফের অভ্যুত্থান ঘটলে সরকারের পালাবদল ঘটে। সিভিল এ্যাভিয়েশন কতৃপক্ষ নতুনভাবে সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়নে মনোযোগ দেয়। উত্তরের ৮ জেলার গণমানুষের আর্থিক উন্নয়নে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে ফের সিভিল এ্যাভিয়েশন কতৃপক্ষ সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণে কাজ শুরু করে। চলমান কাজগুলো দ্রুত শেষ হলে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের যেমন দৃশ্যপট বদলাবে, তেমনি উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গতি ফিরবে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নয়ন কর্মকান্ড বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক একেএম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রাথমিক ধাপ শেষের পথে। তবে এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে কি না তা নিশ্চিত করে বলতে নারাজ বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক।