যশোরের শার্শায় জমি সংক্রান— বিরোধ জেরে একটি পরিবারের ওপর হামলা-ভাংচুর-মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনায় এক নারী ও এক বৃদ্ধ আহত হয়েছেন। এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের বাইকোলা গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আরিফের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় বুধবার (২৩ এপ্রিল) নিরাপত্তা চেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে রিপন হোসেন শার্শা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত ৮ টার দিকে ওই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন- বাইকোলা গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আরিফ ও তাদের মা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন দুই পরিবারের জমিজমা সংক্রান— বিরোধ চলে আসছিল। পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে বাইকোলা গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আরিফের নির্দেশে তার ভাই তরিকুলের নেতৃত্বে ৫/৬ জন একই গ্রামের নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের লোকজনদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা-ভাংচুর-মারপিট করে।
রিপন হোসেন জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে আমরা সীমানায় প্রাচীর নির্মাণ কাজ করি। এদিন রাত ৮ টার দিকে জাহাঙ্গীর আরিফের নির্দেশে তার ভাই তরিকুল ও তার মা কোহিনুর খাতুনসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আমাদের বাড়িতে পাঠায়। এরপর তারা বাড়িতে প্রবেশ করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় আমার ভাবী ডালিয়া খাতুন বাড়ির গেটের ভিতর থেকে গালিগালাজ করতে নিষেধ করে। এরপর তরিকুল ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা আমাদের বাড়ির গেট ভাংচুর করে এবং আমার ভাবীকে এলোপাতাড়ি লাঠি দিয়ে বেদম মারপিট করে। এসময় আমার ভাইজি ঠেকাতে গেলে তাকেও মারপিট করে তার গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। যার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরপর তারা আমাদের পুরাতন বাড়িতে যেয়ে আমার বৃদ্ধ বাবা-মাকে খুঁজতে থাকে। তখন আমার বাবা-মা প্রাণের ভয়ে পাশের বাড়িতে লুকিয়ে থাকে। জানতে পেরে ওই বাড়ি থেকে আমার বাবা-মাকে টেনে হেঁচড়ে বের করে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এসময় তাদের চিৎকারে পাশের বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়। পরে আমি মারপিটের খবর মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে পেরে আহত বাবা ও ভাবীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি করি। পরবর্তীতে তরিকুলের ভাই ওসি জাহাঙ্গীর আরিফ মুঠোফোনে আমাদেরকে হত্যার হুমকি দেন। হত্যার হুমকি দেওয়ায় এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে বুধবার (২৩ এপ্রিল) শার্শা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আরিফের কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন আমি একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমি কেন তাদের হুমকি দেবো। হুমকির ঘটনা মিথ্যা।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন— করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য- বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাহাঙ্গীর আরিফ ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসির দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে মহাসড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ৫ আগস্টের পর যোগাযোগ করে ঢাকার রমনা থানায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক হিসেবে পোস্টিং নেন। ওই সময় জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার দুটি মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান— প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন জাহাঙ্গীর আরিফ। কিন্তু আদালতে ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ওই সময় পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যা নিয়ে দেশের শীর্ষ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।