শাহরিয়ার ও জ্যাকবের নামে কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা

মো: শাহজাহান স্বপন; বিশেষ প্রতিনিধি : | প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
শাহরিয়ার ও জ্যাকবের নামে কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ধরা পড়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও সাবেক উপমন্ত্রী ও ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। দুদক তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া জ্যাকবের স্ত্রী নিলীমা নিগার সুলতানার বিরুদ্ধেও সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করেছে সংস্থাটি।

দুদক জানায়, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ২৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, তার নামে থাকা ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ২৬০ কোটি ৯৪ লাখ টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে, যা সন্দেহজনক এবং মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দাবি তদন্তকারীদের।

মামলায় বলা হয়, এসব লেনদেনের যথাযথ ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। ফলে তার বিরুদ্ধে দুদক আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে।

এক সময়ের ভূমিহীন ও ঋণগ্রস্ত শাহরিয়ার আলম ২০০৮ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তার উপর রয়েছে ৭৬ কোটি টাকার ঋণ। অথচ কালের পরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। এই পরিবর্তন কতটা স্বাভাবিক বা বৈধ ছিল, সেটিই এখন প্রশ্নের মুখে।

অন্যদিকে সাবেক উপমন্ত্রী জ্যাকবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, যার কোনও বৈধ উৎস নেই। পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বেশি অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

তদন্তে আরও উঠে আসে, তার স্ত্রী নিলীমা নিগার সুলতানার নামে রয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার সম্পদ, যার ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্পদের উৎস নিয়েই তৈরি হয়েছে সন্দেহ ও বিতর্ক।

দুদক উভয় নেতার বিরুদ্ধে যেসব ধারায় মামলা করেছে তা হলো:

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা (শুধু শাহরিয়ারের ক্ষেত্রে)

এই ধারাগুলোর অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড ও সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ।

দুদকের এই পদক্ষেপকে কেউ কেউ দেখছেন একটি উদাহরণমূলক উদ্যোগ হিসেবে, যা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার বার্তা দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি হতে পারে রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদলের প্রতিফলন।

তবে একথা অনস্বীকার্য—নাগরিকদের দৃষ্টিতে যখন নেতাদের সম্পদের উৎস ঘোলাটে হয়ে পড়ে, তখন রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র—দুটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে