সামনের দিনগুলোতে গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে লোডশেডিং বাড়বে। অর্থ সংকটে চাহিদা অনুসারে জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে কমে আসতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন, তীব্র হতে পারে লোডশেডিং। এখন দিন দিন গরমের তীব্রতা বাড়ছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি এপ্রিলে দেশজুড়ে একাধিক তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আবহাওয়া পূর্বাভাস রয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। রমজানে লোডশেডিং করতে না হলেও গরম বাড়তে থাকায় সামনের দিনে পরিস্থিতি মোকাবিলা কঠিন হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বিগত ৭৬ বছরের মধ্যে গত বছর এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। এবারও ওই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। গত মঙ্গলবার ১১ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর পরদিন রাজশাহী বিভাগের পাশাপাশি দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। চলতি এপ্রিলে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের আভাসও রয়েছে। দেশের বর্তমানে ২৭ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। তার মধ্যে ৫৮টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৪৪ শতাংশ বা ১২ হাজার মেগাওয়াট। ৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াট (২৬ শতাংশ)। তাছাড়া তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায় সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তার বাইরে ভারত থেকে আমদানি করা হয় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। সৌর, জল ও বায়ু থেকে আরো এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুতের চাহিদা এবার গ্রীষ্মে ছাড়িয়ে যাবে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। সে ক্ষেত্রে গরমে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে। আর অর্থ সংকটে জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্ত হলে তা ছাড়িয়ে যেতে পারে তিন হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গরমে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫-১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ১৫০ কোটি ঘনফুট। রমজান মাসে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গড়ে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হয়। এপ্রিল থেকে আরো ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও অর্থ সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। গত বছরও গরমের মৌসুমে কয়লা, ফার্নেস অয়েল ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন সময় পায়রা, রামপালসহ অনেক সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। তালিকা করে দেশজুড়ে লোডশেডিং করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বকেয়া বিলও বিপদ বাড়াতে পারে। বর্তমান সরকার কিছু বিল পরিশোধ করলেও ফের বাড়ছে বকেয়া। বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলোর এখনো ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। কোম্পানিগুলো দ্রুত পাওনা পরিশোধে সরকারকে তাগাদা দিচ্ছে এবং অর্থ না পেলে সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান ও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য জুন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা লাগবে। চলতি মাস থেকে জুনের মধ্যে ৩৬টি এলএনজি কার্গো আমদানির জন্য জ্বালানি বিভাগ ২০ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা চেয়েছে। একই সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল আমদানি বিল পরিশোধ এবং আইটিএফসি ঋণ শোধে ২০ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা লাগবে। গত বছর মূলত বকেয়ার কারণে বিপাকে পড়েছিল জ্বালানি খাত। কয়লা, এলএনজি, তেলসহ দেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর। ফলে সময়মতো ডলার ছাড় না হলে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি মিলবে না। তাতে লোডশেডিং বাড়বে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত জানান, সরকার অর্থ সংকটে থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের হাত-পা বাঁধা। অর্থ না পেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয়, যা গরমের সময় প্রভাব ফেলবে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, গরমের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবং বকেয়া পরিশোধে অর্থ বিভাগের কাছে বাড়তি টাকা চাওয়া হয়েছে।