সীতাকুণ্ডে কালুশাহ্ মাজার দখল ও ভাংচুরের ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ

এফএনএস (জহিরুল ইসলাম; সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম) : : | প্রকাশ: ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:০৬ পিএম
সীতাকুণ্ডে কালুশাহ্ মাজার দখল ও ভাংচুরের ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ওভার ব্রিজ ফকিরহাট এলাকায় কালুশাহ্ (রহঃ) মাজার দখল, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এলাকাবাসী গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মাজারের দানবাক্স ভেঙে টাকা লুট করা হয়েছে এবং কমপ্লেক্সের অফিস ভাংচুর সহ  জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাবাসী, কালুশাহ্ মাজার কমপ্লেক্স শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারী এবং মাদ্রাসা ও এতিমখানার হাজারো ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এ ঘটনায় তারা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করছেন। তাছাড়া এলাকবাসীর পক্ষ থেকে গত ২০ এপ্রিল সাংবাদিক সম্মেলন করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করেছেন। তারা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ।​ প্রশাসন ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।​ বিশেষ করে এ মাজারের মোতাওয়াল্লি ও কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির বৈধতা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ বছর যাবত মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। সম্প্রতি তাদের এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। গত ৭ এপ্রিল কালুশাহ্ মাজারের বৈধ মোতাওয়াল্লি দাবি করে খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে শতাধিক বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হযরত কালুশাহ্ মাজার দখল করে নেয়। মাত্র এক সাপ্তাহের ব্যবধানে ১২ এপ্রিল মাজার কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সিরাজ উদ দৌলা স্থানীয় এলাকাবাসীকে নিয়ে পুনরায় মাজার কমপ্লেক্সে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।

মুলত হযরত খাজা কালুশাহ্ ( রহঃ) কমপ্লেক্স ওয়াকফ এষ্টেট (ইসি নং: ১৭৭৪৩) কর্তৃক মাদ্রাসা, এতিমখানা, স্কুল ও দাতব্য চিকিৎসালয় সহ ৮ টি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে। স্থানীয় সেলিম মেম্বার, সাইদুর রহমান সাহেদ ও আবদুর রহমান বলেছেন, ইতিমধ্যে এ দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন কল্পে বিএনপি'র সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব অধ্যাপক আসলাম চৌধুরী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে কয়েকদফা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের দ্বন্দ্ব নিরসন করে মাজার জিয়ারত শেষে কমপ্লেক্সে ভিতরে দুই পক্ষকে নিয়ে একসাথে খাওয়া-দাওয়া ও করেছেন। আলহাজ্ব সিরাজ উদ দৌলা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সীতাকুণ্ডের অভিভাবক লায়ন আসলাম চৌধুরীর সিদ্ধান্ত মেনে বর্তমানে মাজার পরিচালনা করে আসছেন বলে তারা জানান।কালুশাহ্ কমপ্লেক্সের মাদ্রাসা বিগত ২০ বছর যাবত শিক্ষকতা করছেন বরকত উল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, প্রতি মাসে মানত, অনুদান ও দানবক্স থেকে ১৫ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা মাজারের উপার্জন হয়ে আসছে। এসব দানকৃত অর্থ মাজারের স্থাপনার রক্ষাণাবেক্ষণাসহ দাতব্য চিকিৎসালয়, স্কুল, মাদ্রাসার ও এতিমখানার ছাত্রদের জন্য ব্যয় করা হয়। 

উদ্ভূত এ পরিস্থিতি নিয়ে কমপ্লেক্সের পরিচালক আলহাজ্ব সিরাজ উদ দৌলা বলেন, খন্দকার শওকত আলি ও খন্দকার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে গত ৭ এপ্রিল মাজার ও কমপ্লেক্সের ভেতরে শতাধিক বহিরাগত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। তারা মাজারের দান বাক্স ও অফিস ভাংচুর এবং এতিমখানার দানকৃত অর্থ, মালামাল লুটপাট করেছে। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল কমপ্লেক্সের ম্যানেজার সোলায়মান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিকে অপর মোতাওয়াল্লি দাবীদার খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তাঁরা হযরত কালুশাহ্ (রহঃ) মাজারের বৈধ মোতাওয়াল্লি। তাঁদের পৈতৃক জায়গার উপর মাজার শরীফটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কালুশাহ্ মাজার কমপ্লেক্সে অধ্যক্ষ আবুল কালাম আমেরী জানান, হযরত খাজা কালুশাহ (রহঃ) একজন সুফি সাধেক ছিলেন। তিনি সুদূর ইয়ামেন হয়ে সামুদ্র পথে এদের এসে বারোআউলিয়ার পূর্ণভুমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সলিমপুর ইউনিয়নের ওভারব্রিজ ফকিরহাট এলাকায় আস্তানা স্থাপন করেন।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে