রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালত এ আদেশ দেন।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার বিএনএস সেন্টার সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আব্দুল জব্বার নামে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পরপরই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে গত ২৭ মার্চ উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে দেখানো হয়। মামলার এজাহারভুক্ত ৩০ নম্বর আসামি হিসেবে নাম রয়েছে তুরিন আফরোজের।
মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হলে পুলিশ তুরিনের দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতে বলেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করতেন তুরিন আফরোজ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদে তিনি ছিলেন সরকারের ঘনিষ্ঠ। এ কারণে মামলার বিষয়ে তাঁর সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
অন্যদিকে, আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানির সময় তুরিন আফরোজ নিজেই আদালতে বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। যে ঘটনার অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সময়কালেও আমি চিকিৎসাধীন ছিলাম। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আমি ‘কারো লোক’। কিন্তু আমি নিজেই জানি না, আমি আসলে কার লোক!”
উভয় পক্ষের যুক্তি শুনে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তুরিন আফরোজ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমসহ একাধিক যুদ্ধাপরাধ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে ২০১৯ সালে যুদ্ধাপরাধ মামলার এক আসামির সঙ্গে ‘গোপন বৈঠকের’ অভিযোগে তাঁকে প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করে সরকার।
এছাড়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্রও জমা দেন তিনি, যদিও দলীয় মনোনয়ন পাননি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ক্ষমতার পালাবদলের প্রেক্ষাপটে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাটি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এদিকে, মামলার আরেক দিক হচ্ছে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুরিন আফরোজসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে একটি আবেদন জমা পড়ে। ওই আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মানবাধিকারকর্মী শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের নামও রয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এই মামলাকে ঘিরে সমাজ ও আইন অঙ্গনে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মামলার স্বচ্ছ তদন্ত এবং তুরিন আফরোজের ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
এ ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক পরিস্থিতির ওপর কী প্রভাব পড়ে, সে বিষয়ে আগাম কিছু বলা না গেলেও, এ মামলার তদন্ত ও পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া গভীর পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে।